মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান সিনেটররা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কর कटौती প্যাকেজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, যদিও এর ব্যয়ভার কিভাবে বহন করা হবে, সেই বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বুধবার সকালে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন তারা। এই প্যাকেজের মধ্যে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য খাতে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ কাটছাঁটের প্রস্তাবও রয়েছে।
উচ্চকক্ষ সিনেটের বাজেট কাঠামোটি নিম্নকক্ষ হাউসের রিপাবলিকানদের ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের কর कटौती প্যাকেজের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারে।
সিনেটে এই পরিকল্পনা অনুমোদন করা গেলে, তা ক্যাপিটল হিলের মিত্রদের মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে সাহায্য করবে এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হবে।
সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা জন থুন জানিয়েছেন, তারা আশা করছেন চলতি সপ্তাহেই বাজেট প্রস্তাবের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে, যা এই প্রক্রিয়াকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সিনেটের বাজেট কমিটির চেয়ারম্যান লিন্ডসে গ্রাহাম জানিয়েছেন, দুপুরের মধ্যেই বাজেট প্রস্তাবের খসড়া প্রকাশ করা হতে পারে।
২০১৭ সালে প্রথমবার এই কর ছাড়ের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছিল, যা ট্রাম্পের প্রধান অভ্যন্তরীণ নীতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই ছাড়গুলো এই বছরের শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে।
ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় শ্রমিকদের টিপস, অতিরিক্ত সময়ের বেতন এবং অন্যান্য আয়ের ওপর কোনো কর আরোপ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাই তিনি এই ছাড়গুলো প্রসারিত করতে চান।
অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা এই কর পরিকল্পনাকে ধনী ব্যক্তিদের সুযোগ করে দেওয়া হিসেবে দেখছেন।
তারা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে সরকার বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ কমাতে বাধ্য হবে, যা দেশের সাধারণ মানুষের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
হাউসের ডেমোক্রেট নেতা হাকিম জেফ্রিস বলেছেন, তারা এই ‘কর জালিয়াতির’ বিরুদ্ধে এবং আমেরিকান জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করবেন।
হাউস ও সিনেটের রিপাবলিকানদের মধ্যে মূল বিরোধ হলো বিদ্যমান কর ছাড়ের বিষয়টি কিভাবে দেখা হবে, সেই বিষয়ে।
এই কর ছাড়ের কারণে ফেডারেল সরকারের প্রায় ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলার রাজস্ব ক্ষতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই ক্ষতির পরিমাণ কিভাবে পূরণ করা হবে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
হাউসের রিপাবলিকানরা স্বাস্থ্য ও অন্যান্য খাতে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার কাটছাঁট করার দাবি জানিয়েছেন, যাতে ফেডারেল ঘাটতি কমানো যায় এবং দেশের প্রায় ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণ সংকট এড়ানো যায়।
তবে, সিনেটের রিপাবলিকানদের ধারণা ভিন্ন।
তাদের মতে, যেহেতু এই কর ছাড়গুলো বর্তমানে বিদ্যমান নীতি, তাই এগুলোকে নতুন করে পরিশোধ করার প্রয়োজন নেই।
তারা এই নীতির ভিত্তিতে কাজ করতে চান, যার ফলে ট্রাম্পের নতুন কর প্রস্তাবগুলোর খরচ বহন করতে হবে।
তারা হাউস কর্তৃক প্রস্তাবিত ২ ট্রিলিয়ন ডলারের কাটছাঁটের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য একটি সর্বনিম্ন ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করতে পারেন।
ডেমোক্রেট সিনেটর চাক শুমার এবং অন্যান্য শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতারা সিনেটের এই পদক্ষেপকে ‘প্রতারণা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তাদের মতে, এটি আমেরিকান জনগণের সঙ্গে একটি ‘নোংরা প্রতারণা’।
নিউ জার্সির ডেমোক্রেট সিনেটর কোরি বুকার এই প্রস্তাবকে গুরুত্বপূর্ণ ফেডারেল পরিষেবাগুলো কাটছাঁট করার একটি কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা ঘাটতি আরও বাড়াবে।
হোয়াইট হাউসে ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এবং কংগ্রেসের রিপাবলিকান নেতারা ট্রাম্পের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে একটি প্যাকেজ তৈরির জন্য গোপনে বৈঠক করছেন।
সোমবার ক্যাপিটলে অন্যান্য সিনেটরদের সঙ্গে এক বৈঠকে বেসেন্ট তাদের দ্রুত এই কাজটি সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।
সাধারণত, বাজেট প্রক্রিয়ার কঠোর নিয়মাবলী মেনে চলার জন্য সিনেটের নিরপেক্ষ পার্লামেন্টারিয়ানের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।
তবে, রিপাবলিকান নেতারা বলছেন, তাদের এই মুহূর্তে পার্লামেন্টারিয়ানের অনুমোদনের প্রয়োজন নাও হতে পারে।
তারা মনে করেন, সিনেট বাজেট কমিটির চেয়ারম্যান গ্রাহামের এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
সবকিছু বিবেচনায়, এই সপ্তাহেই তারা দ্রুত একটি কাঠামো তৈরি করে তা পাস করতে চান।
এর জন্য দীর্ঘ সময় ধরে ভোট হতে পারে, যা সম্ভবত সপ্তাহান্ত পর্যন্ত গড়াতে পারে।
ডেমোক্র্যাটদের বিরোধিতার মধ্যে, আগামী কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে রিপাবলিকানরা চূড়ান্ত প্যাকেজ তৈরি করার চেষ্টা করবেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস