গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৫ উদ্ধারকর্মীর ‘ফাঁসি’!

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ১৫ ফিলিস্তিনি ত্রাণকর্মীর ‘বিচার বহির্ভূতভাবে’ হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ফরেনসিক ডাক্তারের মতে, নিহতদের শরীরে পাওয়া গুলির আঘাতগুলো গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে, যা পরিকল্পিতভাবে খুব কাছ থেকে করা হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গত ২৩শে মার্চ, গাজার রাফাহ শহরের কাছে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, প্যালেস্টিনিয়ান সিভিল ডিফেন্স এবং জাতিসংঘের কর্মীরা নিহত ও আহত ফিলিস্তিনিদের উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন। সেই সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তাঁরা নিহত হন।

পরে বুলডোজার দিয়ে তাঁদের মরদেহ এবং ধ্বংস হওয়া অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য গাড়ি বালির নিচে চাপা দেওয়া হয়।

ফরেনসিক কনসালটেন্ট ড. আহমেদ জাহের, যিনি খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে উত্তোলন করা পাঁচটি মরদেহ পরীক্ষা করেছেন, তিনি জানান, নিহতদের সবাই গুলির আঘাতে মারা গেছেন। তাঁর ভাষ্যমতে, “প্রত্যেকের শরীরেই একাধিক গুলির আঘাত ছিল।

একটি মরদেহ এতটাই বিকৃত হয়ে গিয়েছিল যে, সেটি কুকুর বা অন্য কোনো প্রাণী খেয়েছে, তাই সেটির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করা যায়নি।” ড. জাহের আরও বলেন, “প্রাথমিক বিশ্লেষণ বলছে, তাঁদেরকে দূর থেকে নয়, বরং খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

গুলির ধরন ছিল সুনির্দিষ্ট এবং ইচ্ছাকৃত।

ডাক্তার জাহেরের ভাষ্য অনুযায়ী, “একটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে, গুলি করা হয়েছে কারো মাথায়, অন্য একজনের বুকে এবং তৃতীয় ব্যক্তির শরীরে ছয় থেকে সাতটি গুলি করা হয়েছে।” তবে, মরদেহগুলোর পচন ধরার কারণে অনেক ক্ষেত্রে নিশ্চিত হওয়া কঠিন ছিল বলেও জানান তিনি।

এদিকে, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এই ঘটনাকে মানবিক কর্মীদের জন্য গাজাকে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং এর সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মরদেহ উদ্ধারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাঁরা কিছু মরদেহের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখেছেন।

যদিও ড. জাহের তাঁর পরীক্ষিত পাঁচটি মরদেহের শরীরে বাঁধন শনাক্ত করতে পারেননি, কারণ মরদেহগুলো পচে গিয়েছিল।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার দাবি করেছে, তাঁদের সেনারা অ্যাম্বুলেন্স ও উদ্ধারকারী যানগুলোর ওপর গুলি চালিয়েছিল, কারণ সেগুলো “আলো বা জরুরি সংকেত ছাড়াই সন্দেহজনকভাবে আইডিএফ সেনাদের দিকে এগিয়ে আসছিল”।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আরও দাবি করেন, ২৩শে মার্চের হামলায় তাঁরা হামাসের একজন সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ আমিন ইব্রাহিম শুবাকি এবং হামাস ও প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদের আরও আট ‘সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করেছে।

তবে, রাফাহর কাছে গণকবরে পাওয়া মরদেহগুলোর মধ্যে শুবাকির নাম ছিল না।

নিহত ১৫ জনের মধ্যে আটজন রেড ক্রিসেন্ট অ্যাম্বুলেন্স কর্মী, ছয়জন সিভিল ডিফেন্স কর্মী এবং একজন জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার (আনরওয়া) কর্মী ছিলেন।

এই ঘটনার একমাত্র জীবিত ব্যক্তি, রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবক মুনথার আবেদ, ইসরায়েলিদের এই দাবিকে অস্বীকার করেছেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, হামলার সময় অ্যাম্বুলেন্সগুলো সব নিরাপত্তা প্রোটোকল মেনেই চলছিল।

মুনথার আবেদ বিবিসি রেডিও ফোর-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “দিনের বেলা হোক বা রাতের বেলা, বাইরের এবং ভেতরের আলো সবসময় জ্বলছিল।

সবকিছুই বোঝা যাচ্ছিল যে, এগুলো ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের অ্যাম্বুলেন্স। সরাসরি গুলি করার আগ পর্যন্ত সব আলো জ্বলছিল।

তিনি আরও জানান, অ্যাম্বুলেন্সে কোনো জঙ্গি ছিল না।

উল্লেখ্য, গত ৭ই অক্টোবর থেকে গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে গত জানুয়ারির যুদ্ধবিরতি পর্যন্ত ১,০০০ জনের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *