ভারতে মুসলিম ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে মোদী সরকারের চাঞ্চল্যকর সিদ্ধান্ত!

ভারতের মুসলিম সম্পত্তি বিষয়ক বিতর্কিত আইন: সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব হওয়ার আশঙ্কা

নয়াদিল্লী, [তারিখ উল্লেখ করা হলো না] : ভারতের পার্লামেন্টে মুসলিম ওয়াকফ সম্পত্তি সম্পর্কিত একটি বিতর্কিত বিল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর হিন্দুত্ববাদী সরকার এই আইনটি সংস্কার করতে চাইছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘুদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

এই বিলটি পাশ হলে ওয়াকফ বোর্ডের কার্যকারিতা, সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংখ্যালঘুদের অধিকারের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ওয়াকফ হলো ইসলামি ঐতিহ্য অনুযায়ী গঠিত একটি বিশেষ ব্যবস্থা, যেখানে মুসলমানরা ধর্মীয় বা জনকল্যাণমূলক উদ্দেশ্যে নিজেদের সম্পত্তি উৎসর্গ করেন। এই সম্পত্তি ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

ভারতে ওয়াকফের অধীনে বর্তমানে প্রায় ৮ লক্ষ ৭২ হাজার সম্পত্তি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, গোরস্থান এবং বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এই সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য ১৪.২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

নতুন প্রস্তাবিত আইনে ওয়াকফ বোর্ডগুলোতে অ-মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকে ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করারও প্রস্তাব রয়েছে।

সরকারের দাবি, এই পরিবর্তনের ফলে ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসবে এবং দুর্নীতি হ্রাস করা সম্ভব হবে। তবে সমালোচকদের মতে, এই আইনটি সংখ্যালঘুদের অধিকারকে দুর্বল করবে এবং তাদের ঐতিহাসিক সম্পত্তি দখলের একটি কৌশল হতে পারে।

বিরোধী দল ও মুসলিম সংগঠনগুলো এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করছে। তাদের অভিযোগ, এটি বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি পদক্ষেপ। তাদের মতে, এই আইনের মাধ্যমে মোদী সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করতে চাইছে।

এই বিলটি গত বছর প্রথমবার পার্লামেন্টে উত্থাপিত হয়েছিল, কিন্তু বিরোধিতার মুখে তা একটি সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়। কমিটি তাদের মতামত জানালেও, বিরোধীদের অভিযোগ, সেই মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই আইনের ফলে বিশেষ করে পুরনো মসজিদ এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পন্ন স্থানগুলোর মালিকানা নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের সম্পত্তির কোনো সুস্পষ্ট দলিল নেই।

এছাড়াও, বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইতোমধ্যেই অনেক মসজিদের মালিকানা দাবি করে আসছে। তাদের অভিযোগ, এগুলো একসময় হিন্দু মন্দির ছিল এবং সেগুলোর পুনরুদ্ধার করা উচিত।

ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা ১৪ শতাংশ। দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হওয়া সত্ত্বেও, তারা আর্থিকভাবে পিছিয়ে আছে।

সরকারের এক জরিপ অনুযায়ী, মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ দরিদ্র। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও ভারতে সংখ্যালঘুদের অধিকারের অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

তাদের মতে, মোদী সরকারের আমলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য এবং ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইনের ফলে সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, সরকার ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে।

এটি শুধু একটি আইনের বিষয় নয়, বরং ভারতের বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিও একটি চ্যালেঞ্জ।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *