অবশেষে! ট্রাম্পের দল থেকে বিদায় নিচ্ছেন এলন মাস্ক?

এলোন মাস্কের সরকারি দায়িত্ব সম্ভবত শীঘ্রই শেষ হতে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে কাজ করা এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা সম্ভবত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তার পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন।

কারণ, বিশেষ সরকারি কর্মচারী হিসেবে তার কাজের সময়সীমা দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “তার (মাস্কের) একটি বিশাল কোম্পানি রয়েছে, যা তাকে পরিচালনা করতে হয়… কোনো এক সময় তাকে ফিরে যেতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি তাকে যত দিন সম্ভব রাখতে চাইতাম।”

নিয়ম অনুযায়ী, বিশেষ সরকারি কর্মচারী হিসেবে মাস্ক ১৩০ দিনের বেশি সময় ধরে কাজ করতে পারেন না। যদিও হোয়াইট হাউস আগে জানিয়েছিল যে মাস্ক এখানে থাকবেন, কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে, সম্ভবত মে মাসের শেষের দিকেই তার এই সময়সীমা শেষ হচ্ছে।

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম পলিটিকো বুধবার জানিয়েছে, মাস্ক কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার প্রধান পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। তবে হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

মাস্কের ‘সরকার দক্ষতা বিভাগ’ (Department of Government Efficiency – Doge) নামে পরিচিত একটি বিভাগ ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে ২০২৬ সাল পর্যন্ত চালু থাকার কথা।

এই বিভাগের প্রধান হিসেবে মাস্কের নিয়োগ করা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সম্ভবত বিলিয়নেয়ার মাস্কের সরকারি চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও তাদের পদে বহাল থাকবেন।

জানুয়ারিতে মাস্ক যখন ট্রাম্পের দলে যোগ দেন, তখন থেকেই Doge কার্যত সরকারের বিভিন্ন বিভাগে ‘চেইনস’ চালিয়েছে।

এর ফলস্বরূপ, স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (Department of Health and Human Services) থেকে প্রায় ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। একই সাথে, মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা USAID এবং সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ভয়েস অফ আমেরিকার মতো সংস্থাগুলোকেও বিলুপ্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৬ হাজার ফেডারেল কর্মীর চাকরি গেছে।

এছাড়া, আরও ৭৫ হাজার কর্মী স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়েছেন এবং আরও ১ লাখ ৭১ হাজার কর্মী ছাঁটাই করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে, এই বিশাল সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই ভালো চোখে দেখছে না অনেকেই। মারকেট ল’ স্কুলের এক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৪১ শতাংশ মার্কিন নাগরিক Doge-এর কাজের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।

এমনকি মাস্কের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাও কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে। কুইনিপিয়াক-এর মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে করা জরিপে অর্ধেকের বেশি মানুষ মনে করে, মাস্ক ও Doge-এর কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর।

Doge এরই মধ্যে প্রায় ১৪০ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের দাবি করেছে।

যদিও কিছু অনুসন্ধানী সাংবাদিক তাদের হিসাবের ত্রুটি খুঁজে বের করেছেন। মাস্ক ফক্স নিউজকে বলেছেন, তিনি তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ‘১ ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় অধিকাংশ কাজ’ সম্পন্ন করার আশা করছেন।

মাস্কের এই ভূমিকা নিয়ে ইতোমধ্যে স্বার্থের সংঘাতের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

কারণ, তার কোম্পানিগুলোর সরকারের সাথে অনেক চুক্তি রয়েছে। যদিও একজন বিশেষ সরকারি কর্মচারী হিসেবে তার আর্থিক হিসাব এখনো গোপন রাখা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা আর্থিক সুরক্ষা ব্যুরো (Consumer Finance Protection Bureau)-কে টার্গেট করা হয়েছিল।

কারণ, তারা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে একটি নিয়ম প্রকাশ করেছিল। এই তালিকায় ছিল X (সাবেক টুইটার), যাদের ভিসা-র সাথে অংশীদারিত্বের পরিকল্পনা ছিল।

ডেমোক্র্যাটরা ক্রমশ মাস্কের দিকে রাজনৈতিক আক্রমণ বাড়িয়েছে।

সম্প্রতি, উইসকনসিন সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্বাচনে তার ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিয়ে তারা সমালোচনা করেছে। নিউ জার্সি থেকে নির্বাচিত সিনেটর কোরি বুকার ট্রাম্প ও মাস্কের কঠোর সমালোচনা করে সিনেটে দীর্ঘ বক্তৃতা দেওয়ায় রেকর্ড গড়েছেন।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *