পাকিস্তানের একটি আন্তঃসীমান্তীয় ট্রেনে সন্ত্রাসী হামলায় একজন সহকারী চালকের জীবনের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানা গেছে। গত ১১ই মার্চ, কুইটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন লক্ষ্য করে হামলা চালায় বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)।
এরপর প্রায় ২৮ ঘণ্টা ধরে ট্রেনের ইঞ্জিনেই আটকা ছিলেন সহকারী চালক সাদ কমার।
সকাল ৭:৩০ মিনিটে সাদা-নীল পোশাক পরে বাবা-মাকে বিদায় জানিয়ে কর্মস্থলে এসেছিলেন ৩১ বছর বয়সী সাদ। সহকর্মী ও ৪ শতাধিক যাত্রীকে নিয়ে ট্রেনটি যখন বোলান পর্বতমালা অতিক্রম করছিল, তখনই ঘটে বিপত্তি।
একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ইঞ্জিন, আর তখনি চালক বুঝতে পারেন তারা আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতেও একই ট্রেনের ওপর বোমা হামলা হয়েছিল।
গুলি ও রকেট-চালিত গ্রেনেড দিয়ে হামলাকারীরা যাত্রীদের আলাদা করতে শুরু করে। পরিচয় যাচাই করে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে জিম্মি করা হয়। সাদ কমার দ্রুত ওয়্যারলেসের মাধ্যমে কাছের একটি স্টেশনে হামলার খবর জানান।
কিন্তু ইঞ্জিন বন্ধ করার পরেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কারণ, বুলেট ফুড়ে যাওয়ার কারণে ডিজেল ট্যাঙ্ক থেকে জ্বালানি বের হতে শুরু করে।
চারিদিকে তখন মৃত্যুর বিভীষিকা। পরিবারের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। পরে সেনাবাহিনীর বিশেষ কম্যান্ডো দল এসএসজি-র সদস্যরা এসে সাদ কমারসহ ১৩৫ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে।
ততক্ষণে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় কেটে গেছে।
পাকিস্তানে ব্রিটিশ শাসনের সময় তৈরি হওয়া রেল ব্যবস্থা দেশটির যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। স্বল্প খরচে ভ্রমণের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে ট্রেনের চাহিদা অনেক।
ফলে প্রায়ই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলার শিকার হতে হয় ট্রেনগুলোকে।
সাদের বাবা গুলাম সাবির নিজেও ৪০ বছর ধরে রেলের চালক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি জানান, ছেলেকে সাহসী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এই ঘটনার পর, পরিবারের সদস্যরা সাদকে চাকরি ছাড়তে বললেও তিনি যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণের কথা ভেবে কাজে যোগ দেন।
এই ঘটনার পর, ২৮শে মার্চ থেকে বেলুচিস্তান রুটে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আসন্ন ৩রা এপ্রিল সাদ কমার আবারও ফিরবেন তার পুরোনো কর্মস্থলে, সেই একই পোশাকে, একই ট্রেনে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা