যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কের কারণে এশীয় শেয়ারবাজারে ধস।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির কারণে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই অনেক দেশের শেয়ার সূচক উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছেন, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতিতে। এর মধ্যে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, এবং তাইওয়ানের মতো প্রধান বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলো ক্ষতির শিকার হয়েছে। চীনের থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫৪ শতাংশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, জাপানের ওপর ২৪ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তাইওয়ানের ক্ষেত্রে এই শুল্কের হার দাঁড়িয়েছে ৩২ শতাংশ।
শুল্ক ঘোষণার পর বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারেও দরপতন হয়। এর প্রভাব দেখা যায় বৃহস্পতিবার এশিয়ার বাজারে। জাপানের প্রধান শেয়ারবাজার সূচক নিক্কেই ২২৫ এক দিনেই প্রায় ৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়, এবং দিন শেষে এর পতন হয় ২.৮ শতাংশে।
দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি সূচকও প্রায় ২.৭ শতাংশ কমে যায়। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচকও ২.৪ শতাংশ নিচে নেমে আসে। অস্ট্রেলিয়ার শেয়ারবাজারেও ১০ শতাংশ শুল্কের প্রভাবে ১.৮ শতাংশ দরপতন হয়।
এই পরিস্থিতিতে প্রযুক্তি ও গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। জাপানের প্রযুক্তি জায়ান্ট সনির শেয়ারের দাম ৫.৪ শতাংশের বেশি কমে যায়।
টয়োটা এবং হোন্ডার মতো গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর শেয়ারও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। কোরিয়ার প্রযুক্তি কোম্পানি স্যামসাং এবং গাড়ি প্রস্তুতকারক হুন্দাইয়ের শেয়ারের দামও কমে যায়।
শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতার মধ্যে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন। এর ফলে সোনার দাম বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩,১৬০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও তীব্র করে তুলছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সঙ্গেও নতুন করে বাণিজ্য বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্পের দাবি, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে ‘অন্যায্য’ কার্যকলাপ বন্ধ করতে চাইছেন।
এর আগে, চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি ভালো ছিল না। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্কের পরিমাণ এবং পরিধি নিয়ে ট্রাম্পের নীতির পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন, যা বিশ্ববাজারকে অস্থির করে তুলেছে।
ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। বিদেশি গাড়ি এবং গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা আগামী দিনগুলোতে আরও প্রভাব ফেলতে পারে।
চীন এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করে একে ‘একতরফা হয়রানি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এই শুল্ক বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
জাপানের চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিমাসা হায়াশি নতুন শুল্ককে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডুক-সু এই পরিস্থিতিকে ‘গুরুতর’ হিসেবে বর্ণনা করে বাণিজ্য সংকট মোকাবেলায় সরকারের প্রতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
তাইওয়ানও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপকে ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘অন্যায়’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তাইওয়ান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের উদ্বেগের কথা জানাবে বলে জানিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন