নিউইয়র্কের দোকানে বিড়াল: ভালোবাসার প্রতীক, আইন ভাঙছে?

নিউ ইয়র্কের “বদেগা ক্যাটস”: ভালোবাসার বিড়ালরা, আইনের চোখে কি অপরাধী?

নিউ ইয়র্ক শহরে ছোট মুদি দোকান বা ‘বদেগা’-র (যেমন আমাদের দেশের স্থানীয় মুদি দোকান) বিড়ালগুলো যেন এক একটি ভালোবাসার প্রতীক। এই বিড়ালগুলো দোকানের ভেতরে ঘুরে বেড়ায়, রোদ পোহায়, আর গ্রাহকদের কাছ থেকে আদরেও কাটে সময়। তারা যেন দোকানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কিন্তু আইনের চোখে, এই দৃশ্যটি সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আসলে, নিউ ইয়র্ক রাজ্যের খাদ্য নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, খাদ্য বিক্রি হয় এমন দোকানে কোনো প্রাণী রাখা অবৈধ। যদি কোনো বদেগা মালিকের বিড়ালকে টুনা বা টয়লেট পেপারের পাশে দেখা যায়, তাহলে তাকে জরিমানা করা হতে পারে।

বিষয়টি সম্প্রতি আবার আলোচনায় এসেছে, যখন একটি অনলাইন আবেদনে শহরের কর্তৃপক্ষকে বদেগা বিড়ালদের জরিমানার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এই আবেদনে ১০,০০০ এর বেশি স্বাক্ষর পড়েছে।

তবে, বদেগাগুলোতে পরিদর্শন করার দায়িত্ব রাজ্যের। নিউ ইয়র্ক স্টেট ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড মার্কেটস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের মূল লক্ষ্য হল খাদ্য নিরাপত্তা আইন ও বিধিগুলি মেনে চলা নিশ্চিত করা।

তবে, জরিমানা করার আগে তারা সাধারণত “শিক্ষামূলক সংস্থান এবং সংশোধনের জন্য সময় ও সুযোগ” দিয়ে থাকে।

বিড়ালপ্রেমীদের মতে, এই বিড়ালগুলো আসলে দোকানের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তারা ইঁদুর ও আরশোলাদের মতো উপদ্রবকারীদের তাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অনেক দোকান মালিক আবার মনে করেন, বিড়ালরা দোকানে গ্রাহক টানতে সাহায্য করে।

ব্রুকলিনের গ্রিনপয়েন্টে অবস্থিত একটি বদেগাতে, “মিমি” নামের একটি তুলতুলে ধূসর-সাদা বিড়াল রীতিমতো সেলিব্রিটিতে পরিণত হয়েছে।

এক গ্রাহক তার ভিডিও টিকটকে আপলোড করার পর সেটি ৯ মিলিয়নের বেশি বার দেখা হয়েছে।

মিমি’র দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ইয়ামেনি অভিবাসী আসাম মোহাম্মদের সঙ্গে এই ভিডিওর মাধ্যমে ওই গ্রাহকের দারুণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

আসাম মোহাম্মদ জানান, মিমির একটি সাদা লোমশ ছানা “লিলি”ও এখন গ্রাহকদের খুব পছন্দের। “সে সবার সঙ্গেই খেলা করে,” বলেন মোহাম্মদ।

“আগে মিমি ছিল, এখন সবাই বিখ্যাত।” মিমির আরেক ছানা লিওনেল একই পরিবারের মালিকানাধীন কাছাকাছি একটি বদেগাতে থাকে।

সেখানে সে শুধু বিক্রেতা বা কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রক নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু।

আসামের চাচাতো ভাই আলা নাজলের কথা ধরা যাক। তিনি একজন মুসলিম, যিনি ভোর ৫টা থেকে রমজানের উপবাস শুরু করেছিলেন।

সেদিন ইফতারের জন্য তাঁর আরও এক ঘণ্টা সতেরো মিনিট বাকি ছিল। কিছুটা অস্থির লাগছিল, তাই তিনি লিওনেলের সঙ্গে খেলতে শুরু করেন।

তিনি তাঁর লাল নামাজের কাপড় বিছিয়ে দেন এবং বিড়ালটিকে এক বন্ধুত্বপূর্ণ টগ-অফ-ওয়ার খেলায় আমন্ত্রণ জানান। খেলাটি তাঁর ক্ষুধা ভুলিয়ে দিতে সাহায্য করেছিল।

“হ্যাঁ, ও আমাকে এতে সাহায্য করে,” বলেন নাজুল।

গ্রিনপয়েন্টের আরেক বদেগা মালিক সালিম ইয়াফাই জানান, তাঁর বিড়াল “রিলি”-র জনপ্রিয়তা এতটাই যে, এক নিয়মিত গ্রাহক তাকে কিনতে চেয়েছিলেন।

ইয়াফাই জানান, তিনি ১০,০০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১ লক্ষ টাকা) দাম বলেছিলেন, কিন্তু লোকটি ১,০০০ ডলার (প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা) দিতে রাজি হয়েছিলেন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *