অস্ট্রেলিয়ার ট্রেনে ভ্রমণ: মুগ্ধ করা এক অভিজ্ঞতা!

বাংলার বুকে রেলপথের গল্প: সিডনি থেকে পার্থ, এক অবিস্মরণীয় যাত্রা।

অস্ট্রেলিয়ার বিস্তীর্ণ প্রান্তরের বুক চিরে ছুটে চলেছে একটি ট্রেন, যার নাম ‘ইন্ডিয়ান প্যাসিফিক’। সিডনি থেকে শুরু হয়ে প্রায় ৪,৩৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এটি পৌঁছে যায় পশ্চিম উপকূলের শহর পার্থে। এই যাত্রাপথ যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস, যেখানে প্রকৃতির বিচিত্র রূপ আর মানুষের জীবন এক সুতোয় বাঁধা।

যারা ভ্রমণ ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই ট্রেনযাত্রা এক দারুণ অভিজ্ঞতা।

ভ্রমণটি শুরু হয় সিডনি থেকে। আধুনিক এই শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে ট্রেন যখন এগিয়ে চলে, তখন ধীরে ধীরে দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করে। প্রথমে চোখে পড়ে সবুজ উপত্যকা, পাহাড় আর দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ।

এরপর আসে নিউ সাউথ ওয়েলসের রুক্ষ অঞ্চল, যেখানে প্রকৃতির অন্য রূপ। দিনের আলো কমে আসার সাথে সাথে ট্রেনের কামরায় শুরু হয় রাতের নীরবতা।

এই যাত্রাপথে একটি বিশেষ স্থান হলো ব্রোকেন হিল। এখানে রয়েছে ‘প্যালেস হোটেল’, যা “প্রিসিলা, কুইন অফ দ্য ডেজার্ট” (The Adventures of Priscilla, Queen of the Desert) নামক বিখ্যাত চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল।

ব্রোকেন হিলের সংস্কৃতি বেশ আকর্ষণীয়, যেখানে বিভিন্ন ধরনের মানুষের বসবাস। স্থানীয় ‘ড্রাগ কুইন’ শেলিটা বাফেটের সঙ্গে কথা বললে এখানকার জীবনযাত্রা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়।

এরপর শুরু হয় এক অন্য জগৎ—নালোরবার সমভূমি। এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এবং জনমানবশূন্য অঞ্চল। এখানে গাছপালা প্রায় নেই বললেই চলে।

দিগন্ত বিস্তৃত এই ভূমি যেন এক শান্ত, নিস্তব্ধ সমুদ্র। দিনের আলোয় এর রুক্ষ রূপ দেখা যায়, আবার রাতে তারা ঝলমলে আকাশের নিচে এটি আরও মোহময় হয়ে ওঠে। এই পথ পাড়ি দিতে প্রায় ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে।

নালোরবার পেরিয়ে ট্রেন যখন পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করে, তখন ধীরে ধীরে দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে। সবুজ ঘাস আর বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের সমাহার চোখে পড়ে। এরপর আসে কুক নামের একটি জনপদ, যা এক সময় রেলকর্মীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

বর্তমানে এখানে জনবসতি খুবই কম।

ট্রেনযাত্রা শেষে যখন পার্থ শহরে পৌঁছানো যায়, তখন মনে হয় যেন এক নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। আধুনিক এই শহরে সবকিছু যেন সাজানো-গোছানো।

এই দীর্ঘ যাত্রাপথে প্রকৃতির বিচিত্র রূপ, মানুষের সংস্কৃতি আর ইতিহাসের সাক্ষী হওয়া যায়। যারা প্রকৃতির নীরবতা ও নতুন অভিজ্ঞতা ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই ট্রেন যাত্রা এক অসাধারণ সুযোগ।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *