আলোচনা-সমালোচনার ঝড়: পুরনো ‘গ্লি’ নিয়ে কেন এত উন্মাদনা?

নব্বই দশকের শেষের দিকে এবং দুই হাজার দশকে ‘Glee’ (গ্লি) নামের একটি টেলিভিশন ধারাবাহিক (টিভি সিরিজ) সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যে এটি বেশ জনপ্রিয় ছিল।

স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গীত ও নাচের প্রতি ভালোবাসাই ছিল এই সিরিজের মূল বিষয়। সম্প্রতি, এই ধারাবাহিকটি নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।

তাদের অনেকেই এই সিরিজটি নতুন করে দেখছে, কেউ ভালোবাসায়, আবার কেউ এর দুর্বল দিকগুলো নিয়ে সমালোচনা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে তৈরি হওয়া এই সিরিজে, সংগীতানুষ্ঠান এবং বিভিন্ন গানের মাধ্যমে তাদের আবেগ ও জীবন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই ধারাবাহিকটি তৈরি করেন রায়ান মার্ফি।

শুরুতে এর বিষয়বস্তু ও নির্মাণশৈলী দর্শকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় ছিল। গানগুলোও ছিল খুবই জনপ্রিয়।

‘Glee’-এর ‘Don’t Stop Believin’ গানটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, যুক্তরাজ্যের চার্টে এটি দীর্ঘ সময় ধরে ছিল।

তবে, সময়ের সাথে সাথে এই সিরিজের আকর্ষণ কমে যায়। দুর্বল চিত্রনাট্য এবং গানের নির্বাচন নিয়ে অনেক দর্শক অসন্তুষ্ট হন।

২০১৫ সালে এটির শেষ সিজন সম্প্রচারিত হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, সম্ভবত এই সিরিজের জাদু শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন, প্রায় এক দশক পর, ‘Glee’ আবার আলোচনায় এসেছে।

তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে ‘Gen Z’-এর সদস্যরা, এই ধারাবাহিকটি ডিজনি প্লাস (Disney+) এবং হুলু (Hulu)-এর মতো প্ল্যাটফর্মে দেখছে। টিকটকে (TikTok) এই সিরিজের বিভিন্ন দৃশ্য প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, যা নস্টালজিয়া তৈরি করছে।

এমনকি, ‘Glee’-এর নাচের কিছু অংশ অনুকরণ করে অনেকে ভিডিও বানাচ্ছে। ইউটিউবে (YouTube) সিরিজটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, যা দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছে।

কিন্তু কেন এই সময়ে এসে ‘Glee’-এর প্রতি মানুষের এত আগ্রহ? এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, ধারাবাহিকটিতে কিছু বিতর্কিত বিষয় ছিল।

অনেক দর্শক মনে করেন, সিরিজের কিছু বিষয় এখনকার সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। উদাহরণস্বরূপ, স্কুলের একটি শুটিং-এর ঘটনা নিয়ে তৈরি করা পর্ব, অথবা একটি চরিত্রের উভকামিতা নিয়ে করা মন্তব্য—এগুলো সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

এছাড়াও, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু আপত্তিকর সম্পর্ক নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।

অন্যদিকে, অনেকে মনে করেন, ‘Glee’-এর দুর্বল দিকগুলোই এর আকর্ষণ। এই সিরিজের মাধ্যমে যেন তারা ২০০৯-এর দশকের নস্টালজিক সময়ে ফিরে যায়।

সেই সময়ের ফ্যাশন, সংস্কৃতি, এবং সামাজিক বিষয়গুলো তাদের আকৃষ্ট করে।

‘Glee’ ছিল মূলত একটি সংগীত নির্ভর সিরিজ। এর গানগুলো গল্পের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিল, যা চরিত্রগুলোর আবেগ ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে। এই সিরিজের পরিচালক ক্রিস্টোফার বাফা মনে করেন, গানগুলো গল্পের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।

তবে, ‘Glee’-এর সঙ্গে কিছু দুঃখজনক ঘটনাও জড়িত। এই সিরিজের কয়েকজন শিল্পী বিভিন্ন সময়ে আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়াও, অভিনেতা ও কলাকুশলীদের মধ্যে অনেকে মারা গেছেন।

এই ঘটনাগুলো আজও দর্শকদের মনে গভীর দাগ কাটে।

যদিও ‘Glee’ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবে এর ইতিবাচক দিকগুলোও অস্বীকার করা যায় না। এই সিরিজটি সমাজে বিভিন্ন ধরনের মানুষের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছে, যা অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

লেখক আলী অ্যাডলার মনে করেন, ‘Glee’-এর মতো এত বেশি প্রতিনিধিত্বমূলক কাজ খুব কমই হয়েছে।

বর্তমানে, ‘Glee’ নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে। অনেকে মনে করেন, এই ধারাবাহিকটি তাদের কৈশোরের কথা মনে করায়। দর্শক-সমালোচকদের মধ্যে এই সিরিজটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও, এর জনপ্রিয়তা এখনো অম্লান।

তথ্যসূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *