যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস সিটিতে সরকারি কর্মীদের ছাঁটাইয়ের ফলে সেখানকার জনজীবন ও অর্থনীতিতে যে গভীর প্রভাব পড়েছে, সেই বিষয়ে একটি নতুন প্রতিবেদন।
কানসাস সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এখানকার অর্থনীতি অনেকাংশে সরকারি চাকরির উপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি সরকারি দপ্তর ‘ডগ’ (DOGE) -এর কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত এই শহরের মানুষের জীবনে এক গভীর অনিশ্চয়তা নিয়ে এসেছে। বিশ্বখ্যাত সংবাদ মাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই উদ্বেগের চিত্র।
কানসাস সিটির মেয়র কুইন্টন লুকাস এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “শহরটির জন্য এটা খুবই কষ্টের হবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে পরিবারগুলোর উপর, সেই সঙ্গে ছোট-বড় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”
কানসাস সিটিতে ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় প্রায় ৩০ হাজার কর্মী কাজ করেন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা (আইআরএস) এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরও রয়েছে। জানা গেছে, এখানকার কর্মীদের মধ্যে অনেকেই এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে পারবেন। ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, কিছু সরকারি সংস্থার কর্মী সংখ্যা অর্ধেক পর্যন্ত কমানো হতে পারে।
অর্থনীতিবিদ ফ্রাঙ্ক লেনকের মতে, সরকারি কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে কানসাস সিটিতে প্রায় ১৪,৬০০ জন কর্মী চাকরি হারাতে পারেন। এর ফলে নির্মাণ, খুচরা ব্যবসা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পেশাদার পরিষেবা এবং আতিথেয়তা শিল্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে।
এই ছাঁটাইয়ের সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে শহরের আবাসন বাজারেও। অনেক সরকারি কর্মচারী তাদের চাকরি হারানোর আশঙ্কায় বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার কথা ভাবছেন। মাইকেল পিয়ার্স নামের এক আবাসন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, কর্মীরা এখন পর্যন্ত টিকে থাকার চেষ্টা করছেন, কারণ এখানকার উচ্চ মূল্য এবং সুদের হারের কারণে অন্য কোথাও যাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সরকারি ভবনগুলোতেও এর প্রভাব পড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন কানসাস সিটির অন্তত চারটি সরকারি ভবন বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছে।
জ্যাসন বাক নামের এক ব্যক্তি, যিনি সরকারি জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (জিএসএ) কাজ করতেন, ছাঁটাই হওয়ার পর একটি বার-এ খণ্ডকালীন কাজ শুরু করেছেন। তিনি সিএনএনকে বলেন, “আমি ঝুঁকি নিতে রাজি ছিলাম। আমি জানতাম, সরকারি চাকরি কতটা মূল্যবান।” তিনি এখন অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চয় করতে এবং নতুন চাকরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে চান।
আইআরএস-এর কর্মী ড্যানিয়েল শার্পেনবার্গ জানিয়েছেন, তিনি চাকরি হারানোর আশঙ্কায় একটি সিনেমা হলে খণ্ডকালীন কাজ করছেন। তিনি বলেন, “আমার বয়স ৪৫ বছর, দুটি চাকরি করার মতো বয়স আর নেই।”
আইআরএস-এর ২৮ বছরের অভিজ্ঞ কর্মী শ্যানন এলিস তার বাড়ির দাম কত হতে পারে, সে বিষয়ে রিয়েল এস্টেট এজেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি এবং তার স্বামী দুজনেই স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন এবং তাদের স্বাস্থ্য বীমার খরচ বহন করতেও সমস্যা হচ্ছে।
আবাসন ও নগর উন্নয়ন বিভাগের কর্মী ট্রেকা হেনরি তার চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তারা পরিবারের পরিচারিকাকে বিদায় করেছেন এবং এ বছর ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা বাতিল করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কানসাস সিটির এই পরিস্থিতি রিপাবলিকানদের নীতির একটি ফলস্বরূপ। স্থানীয় রিপাবলিকান নেতা জশ হাওলি মনে করেন, এই ছাঁটাইয়ের ফলে সরকারি সংস্থাগুলো আরও দক্ষ হবে। তবে অনেকে মনে করছেন, এর ফল স্থানীয় জনগণের জন্য ভালো হবে না।
কানসাস সিটির মেয়র কুইন্টন লুকাস, যিনি ডেমোক্রেট দলের সদস্য, ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের জন্য তার প্রশাসনে চাকরির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, এই অঞ্চলের পক্ষে এত সংখ্যক কর্মীর জন্য নতুন চাকরির ব্যবস্থা করা কঠিন।
কানসাস সিটির বর্তমান বেকারত্বের হার ৪.২ শতাংশ। যদিও এখানে অনেক চাকরির সুযোগ রয়েছে, তবে সরকারি কর্মীদের জন্য উপযুক্ত দক্ষতা সম্পন্ন চাকরি খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন