আতঙ্কে বিশ্ব! ট্রাম্পের শুল্কে বাজারের বড় দরপতন!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এই পদক্ষেপের ফলে, বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে, যা বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্কগুলি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির’ থেকেও খারাপ হতে পারে।

বুধবার প্রকাশিত এই শুল্ক নীতির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া এবং ইউরোপের শেয়ার বাজারগুলোতে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের সংরক্ষণমূলক নীতি ১৯৩০ দশকের পর বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত।

এর ফলস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের এস&পি ৫০০ এবং প্রযুক্তি নির্ভর নাসডাক-১০০ সূচকগুলি যথাক্রমে ৩ শতাংশ এবং ৩.৫ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে।

জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ৪.৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে, এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি ও হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচকও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

ভিয়েতনামের শেয়ার বাজারেও বড় ধরনের পতন দেখা গেছে।

ডাচ ব্যাংকের বৃহত্তর চীনের প্রধান অর্থনীতিবিদ লিন সং বলেন, “শুল্ক বৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি আগ্রাসী ছিল।” অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই ধরনের আগ্রাসী পদক্ষেপের ফলে বড় দেশগুলো প্রতিশোধ নিতে পারে, তবে ছোট দেশগুলো হয়তো আলোচনার মাধ্যমে শুল্কের হার কমানোর চেষ্টা করবে।

লস অ্যাঞ্জেলেস ভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ড্যানিয়েল আইভস ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির চেয়েও খারাপ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেও, অনেক দেশের পণ্যের ওপর আরও বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

এর মধ্যে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোও রয়েছে।

চীনের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা আগে আরোপিত শুল্কের সঙ্গে যোগ হয়ে মোট ৫৪ শতাংশ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে।

একটি প্রতিবেদনে নমুরা’র প্রধান চীন অর্থনীতিবিদ টিং লু বলেছেন, “আমাদের মতে, চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক এবং অন্যান্য পদক্ষেপ বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ।”

ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ২০ শতাংশ, জাপানকে ২৪ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে ২৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হতে পারে।

কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ৪৪ থেকে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা তাদের অর্থনীতির জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে।

তবে, এই শুল্ক নীতির ফলে কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে, যেমন সেমিকন্ডাক্টর, তেল এবং ঔষধ প্রস্তুতের উপাদান।

সিঙ্গাপুরের হিনরিচ ফাউন্ডেশনের বাণিজ্য নীতি বিভাগের প্রধান ডেবোরা এলমস বলেছেন, “এই শুল্কের হার প্রত্যাশার চেয়ে খারাপ।

রপ্তানি-নির্ভর দেশগুলোতে এটি কর্মসংস্থান হ্রাস করবে।”

চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

যদিও অনেক ছোট অর্থনীতির দেশ এই পরিস্থিতিতে দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্ক নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি।

তবে আলোচনার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে।

অ্যানেক্স ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান জ্যাকবসেন বলেন, “শুল্ক ঘোষণার ফলে অনিশ্চয়তা দূর হয়নি, তবে এর কারণে অর্থনৈতিক পরিণতি কতটা খারাপ হবে, সে সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।”

হংকংয়ের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক নাতিক্সিসের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ গ্যারি এন-এর মতে, মার্কিন বাণিজ্য অংশীদাররা একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা করবে, তবে কিছু শুল্ক সম্ভবত স্থায়ী হবে।

জেপি মরগান এবং গোল্ডম্যান স্যাকস-এর মতে, ট্রাম্পের এই সংরক্ষণবাদী নীতির কারণে চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দা আসার সম্ভাবনা যথাক্রমে ৪০ শতাংশ এবং ৩৫ শতাংশ।

বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভেলকো ফোটাক মনে করেন, বাজার এখনো ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে চূড়ান্ত হিসেবে দেখছে না।

তার মতে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, যদি বাণিজ্য যুদ্ধ আরও বাড়ে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *