যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে বড় পরিবর্তন, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের ঘোষণা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, যা বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
তিনি বিভিন্ন দেশের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউজে এক ভাষণে ট্রাম্প জানান, এই শুল্ক নীতি মূলত সেসব দেশের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে, যাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে অথবা যারা মার্কিন পণ্যের উপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বহু বছর ধরে আমাদের দেশ লুণ্ঠিত হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে, এবং বন্ধু ও শত্রু নির্বিশেষে বিভিন্ন দেশ আমাদের সম্পদ লুটে নিয়েছে।”
ট্রাম্পের এই নতুন শুল্ক নীতি অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশের উপর ভিন্ন হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো চীনের উপর আরোপিত শুল্ক।
ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, চীনের পণ্যের উপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে আরো ৩৪ শতাংশ শুল্ক যোগ করা হবে। ফলে, চীন থেকে আসা পণ্যের উপর মোট ৫৪ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ট্রাম্প নির্বাচনের সময় চীনের পণ্যের উপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও, মেক্সিকো এবং কানাডার কিছু পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যদিও এই দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তি (USMCA) এর আওতায় কিছু পণ্যের শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে।
এই শুল্ক নীতিমালার আওতায় আসা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, সিরিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো দেশ। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের থেকেও আমদানি করা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই শুল্কগুলো আগামী ৫ ও ৯ই এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।
তবে, কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে এই শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তামা, ঔষধ, সেমিকন্ডাক্টর, কাঠ ও জ্বালানি পণ্য, সেইসাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ দ্রব্য, যা যুক্তরাষ্ট্রে সহজলভ্য নয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির ফলে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এর ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের উপর এর সরাসরি প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়, তবে বিশ্ব বাজারের পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছু প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে, তাদের উপর শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিতেও পরিবর্তন আসতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা