ট্রাম্পের নতুন শুল্ক: বাংলাদেশের উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি সকল দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন। এই পদক্ষেপের মূল কারণ হিসেবে তিনি অন্যান্য দেশগুলোর বাণিজ্য নীতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির ভারসাম্য আনাকে উল্লেখ করেছেন। তার এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ব বাণিজ্য বাজারে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, কারণ এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এই শুল্ক নীতি অনুযায়ী, সকল দেশ থেকে আসা পণ্যের উপর প্রাথমিক ভাবে ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। এছাড়াও, যে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (অর্থাৎ, যে দেশগুলো আমেরিকায় বেশি পণ্য বিক্রি করে, কিন্তু আমেরিকার থেকে তাদের আমদানি কম) বজায় রাখে, তাদের পণ্যের উপর শুল্কের হার আরও বেশি হবে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ তার নির্বাচনী প্রচারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে, যেখানে তিনি বিদেশি পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করে অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কথা বলেছিলেন।
তবে, অর্থনীতিবিদরা ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাদের মতে, শুল্ক আরোপের ফলে আমদানিকারকদের উপর করের বোঝা চাপবে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের উপর গিয়ে পড়বে। অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যেতে পারে। যদিও ট্রাম্পের সমর্থকরা মনে করেন, এর ফলে অন্যান্য দেশগুলোও তাদের শুল্ক কমাতে বাধ্য হবে, যা বাণিজ্য ক্ষেত্রে একটা ভারসাম্য আনবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের দাম বাড়ে, তবে এর প্রভাব বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যেও পড়তে পারে। কারণ, অনেক বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চাহিদা কমে গেলে, বাংলাদেশের রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতি কিভাবে কাজ করে? সাধারণত, শুল্ক হল আমদানি করা পণ্যের উপর ধার্য করা কর। এই কর সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা (Customs and Border Protection)। এই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হয় এবং তা ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে ব্যবহৃত হয়। যদিও এই অর্থের ব্যবহার নিয়ে কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
ট্রাম্প অবশ্য এই শুল্ক থেকে পাওয়া অতিরিক্ত রাজস্ব ব্যবহার করে কর কমানোর পক্ষে ছিলেন, যা সম্ভবত ধনী ব্যক্তিদের বেশি সুবিধা দিত। উদাহরণস্বরূপ, তিনি তার আগের মেয়াদে পাস হওয়া কিছু কর কমানোর মেয়াদ বাড়াতে চেয়েছিলেন। তবে, এমনটা হলে সরকারের রাজস্ব কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শুল্কের কারণে জিনিসপত্রের দাম কত দ্রুত বাড়তে পারে, তা নির্ভর করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিক্রিয়ার উপর। তবে ধারণা করা হচ্ছে, শুল্ক আরোপের এক থেকে দুই মাসের মধ্যেই ভোক্তারা দাম বাড়তে দেখতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে, যেমন মেক্সিকো থেকে আসা পণ্যের ক্ষেত্রে, দাম আরও দ্রুত বাড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, শুল্ক নির্ধারণের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস এই ক্ষমতা প্রেসিডেন্টকে দিয়েছে। বিভিন্ন আইনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা সাধারণত জাতীয় নিরাপত্তা বা কোনো নির্দিষ্ট শিল্পের ক্ষতির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকে।
অন্যান্য দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করে থাকে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (World Trade Organization) তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্ক হার ২.২ শতাংশ, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union) ক্ষেত্রে এটি ২.৭ শতাংশ, চীনের ৩ শতাংশ এবং ভারতের ১২ শতাংশ।
তথ্য সূত্র: Associated Press