ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতি: ক্ষতিগ্রস্থ হবে যুক্তরাষ্ট্র!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ ভোক্তারা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করা প্রায় সকল পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন। ট্রাম্প এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ‘মুক্তি দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, সেখানকার সাধারণ মানুষ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশটির ভাবমূর্তির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।

নতুন এই শুল্ক আরোপের ফলে, বিভিন্ন পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মার্কিন ভোক্তারা। শুধু তাই নয়, এই সিদ্ধান্তের কারণে সরবরাহ শৃঙ্খলে দেখা দিতে পারে জটিলতা। এর ফলস্বরূপ, বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। বর্তমানে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট সরবরাহ চেইন সংকট এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা চলছে, তার মধ্যেই এই শুল্ক বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে।

এই শুল্ক নীতি শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বরং মিত্র দেশগুলোর জন্যও উদ্বেগের কারণ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসা পণ্যের উপর ২০ শতাংশ, জাপান থেকে আসা পণ্যের উপর ২৪ শতাংশ, তাইওয়ান থেকে আসা পণ্যের উপর ৩২ শতাংশ এবং ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে আসা পণ্যের উপর যথাক্রমে ২৬ ও ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে, এই দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অতীতে রিপাবলিকান পার্টি মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে জোরালো সমর্থন যুগিয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে, প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান বাণিজ্যকে সমৃদ্ধির চাবিকাঠি হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। তবে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ সেই নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত।

ট্রাম্প এই শুল্ক আরোপের পক্ষে তাঁর যুক্তি হিসেবে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র কথা উল্লেখ করেছেন এবং এর জন্য তিনি ‘আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন’ (International Emergency Economic Powers Act) ব্যবহার করছেন। তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আইনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা বাণিজ্য ক্ষেত্রে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।

মার্কিন কংগ্রেসে যদিও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হবে। এর কারণ হিসেবে তাঁরা কংগ্রেসের বর্তমান রাজনৈতিক বিভাজনকে দায়ী করছেন।

এই পরিস্থিতিতে, এখন দেখার বিষয় হলো, কংগ্রেস ট্রাম্পের এই বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে কিনা। যদি তা না পারে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং সাধারণ মানুষের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব আরও বাড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *