বিশ্ব ব্যাংক তানজানিয়ার একটি পর্যটন প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। রুয়াহা ন্যাশনাল পার্কের আশেপাশে বসবাসকারী গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের মধ্যে সহিংসতা, হত্যা, যৌন নিপীড়ন এবং গবাদি পশু ছিনতাইয়ের মতো অভিযোগ রয়েছে।
২০১৭ সালে, বিশ্ব ব্যাংক রিজিলিয়েন্ট ন্যাচারাল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ফর ট্যুরিজম অ্যান্ড গ্রোথ (Regrow) প্রকল্পের জন্য ১৫ কোটি মার্কিন ডলার অনুমোদন করে, যার মূল লক্ষ্য ছিল পর্যটনের উন্নতি করা।
অভিযোগ উঠেছে, এই প্রকল্পের অধীনে তানজানিয়ার ন্যাশনাল পার্ক কর্তৃপক্ষের (Tanapa) কিছু কর্মীর দ্বারা গ্রামবাসীদের উপর চরম নির্যাতন চালানো হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে, তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং গবাদি পশু কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
কিছু ক্ষেত্রে, গ্রামবাসীকে হত্যা এবং গুম করার অভিযোগও উঠেছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, বিশ্ব ব্যাংক একটি তদন্ত শুরু করে এবং প্রকল্পের পরিকল্পনা ও তদারকিতে গুরুতর ত্রুটি খুঁজে পায়।
এই ত্রুটিগুলির কারণে, গ্রামবাসীদের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক স্বীকার করেছে যে, প্রকল্পটি তানজানিয়া সরকারের পুনর্বাসন নীতি লঙ্ঘন করেছে এবং সহিংসতার ঘটনাগুলো জানানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের সহায়তার জন্য, বিশ্ব ব্যাংক একটি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই কর্মসূচির আওতায়, ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং তাদের আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য ২৮ লক্ষ মার্কিন ডলার ব্যয় করা হবে।
এছাড়াও, তানজানিয়া জুড়ে বিকল্প জীবিকা নির্বাহের জন্য ১১ কোটি মার্কিন ডলারের একটি বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই অর্থ রুয়াহা সহ বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের সহায়তা করবে।
ওকল্যান্ড ইনস্টিটিউট নামক একটি গবেষণা সংস্থা, যারা ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামবাসীদের আইনি পরামর্শ দিচ্ছে, তারা বিশ্ব ব্যাংকের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
তবে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের জন্য আরও ব্যাপক ক্ষতিপূরণ এবং তাদের অধিকার পুনরুদ্ধারের দাবি জানাচ্ছে। তারা চাইছে, পার্কের সীমানা ১৯৯৮ সালের সীমানায় ফিরিয়ে আনা হোক, জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে যে বাধা সৃষ্টি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক এবং নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের জন্য সুবিচার নিশ্চিত করা হোক।
বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষতিপূরণ সরাসরি পরিশোধ করার ক্ষমতা তাদের নেই। তবে, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তানজানিয়ার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পর্যটন। ২০১৯ সালে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি এসেছিল পর্যটন খাত থেকে।
বিশ্ব ব্যাংকের এই পদক্ষেপ তানজানিয়ার পর্যটন এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরির চেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান