আতঙ্কে গ্রামবাসী! নেকড়ের আক্রমণে বাড়ছে মৃত্যু, জরুরি অবস্থা জারির পথে?

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে নিউ মেক্সিকোতে, বিরল প্রজাতির মেক্সিকান ধূসর নেকড়েদের কারণে গবাদি পশু ও পোষা প্রাণীর জীবন নিয়ে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মধ্যে তৈরি হয়েছে এক গভীর সংকট।

নেকড়েদের আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে, এমনকি এদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারি হস্তক্ষেপের দাবিও উঠেছে।

নিউ মেক্সিকোর একটি গ্রামীণ এলাকা, ক্যাটরন কাউন্টির কর্মকর্তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি অবস্থা জারির কথা ভাবছেন। তাদের অভিযোগ, নেকড়েরা এখন মানুষের ভয় পায় না এবং অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

ফলে গৃহপালিত পশু ও পোষা প্রাণীদের ওপর আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের পাশাপাশি নেকড়ে তাড়ানোর (হেইজিং) ব্যবস্থা নিতে চাইছে।

শুধু নিউ মেক্সিকোতেই নয়, ওরেগন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু অংশেও একই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেখানকার কর্মকর্তারা বলছেন, নেকড়েদের দৌরাত্ম্য ক্রমশ বাড়ছে এবং গবাদি পশুর মৃত্যুও ঘটছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার দুটি কাউন্টি এরই মধ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে, আর অন্য একটি কাউন্টির শেরিফ রাজ্য সরকারের বন্যপ্রাণী কর্মকর্তাদের সাহায্য চেয়েছেন।

মেক্সিকান ধূসর নেকড়ে একসময় প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ১৯৯০ এর দশকের শেষ দিকে বন্য পরিবেশে এদের পুনরায় ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

কিন্তু এরপর থেকেই স্থানীয় গবাদি পশু পালনকারীরা এর বিরোধিতা করে আসছেন। তাদের যুক্তি, নেকড়েদের কারণে তাদের জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়েছে, যা ইতিমধ্যেই খরা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কঠিন হয়ে উঠেছে।

যদিও সরকার ক্ষতিপূরণের কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, তবুও তা যথেষ্ট নয় বলেই তাদের ধারণা।

অন্যদিকে, পরিবেশবাদীরা বলছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকায় মেক্সিকান ধূসর নেকড়েদের অবশ্যই জায়গা দেওয়া উচিত। তারা প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের মৎস্য ও বন্যপ্রাণী বিভাগের সমালোচনা করে, কারণ তাদের মতে, বন্য পরিবেশে আরও বেশি নেকড়ে না ছাড়ার কারণে এদের মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে।

পরিবেশবিদদের দাবি, মেক্সিকান নেকড়ের আক্রমণে মানুষ আহত হয়েছে এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড নেই।

সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, অ্যারিজোনা ও নিউ মেক্সিকোতে অন্তত ২৮৬টি মেক্সিকান ধূসর নেকড়ে বসবাস করছে। যা গত নয় বছরের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা।

তবে, কর্তৃপক্ষের হিসেবে, ২০২৪ সালে ৯৯টি গবাদি পশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যা আগের বছরগুলোর তুলনায় কিছুটা কম। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপকরা নেকড়েদের তাড়ানোর জন্য গত বছর ২৯০টি সফল অভিযান পরিচালনা করেছেন।

ক্যাটরন কাউন্টি কর্তৃপক্ষের মতে, নেকড়ে পুনর্বাসন কর্মসূচি এলাকার মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তারা রাজ্য সরকারের কাছে জরুরি আর্থিক সাহায্য চেয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিউ মেক্সিকো ন্যাশনাল গার্ডের সহায়তাও চেয়েছেন।

ওরেগনের লেক কাউন্টির গবাদি পশু পালনকারীরা তাদের পালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ কেউ রাতের বেলা পাহারার জন্য নাইট ভিশন গগলস কিনেছেন।

ফেব্রুয়ারিতে এই কাউন্টি জনসাধারণের নিরাপত্তা ও গবাদি পশুর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। ক্যালিফোর্নিয়ার সিয়েরা কাউন্টিও সম্প্রতি একই পদক্ষেপ নিয়েছে, এর আগে মার্চে মোডোক কাউন্টি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে।

অন্যদিকে, কলোরাডোতে নেকড়ে পুনর্বাসন নিয়ে জনগণের মধ্যে ভিন্নমত দেখা যাচ্ছে। কিছু মানুষ এই বিষয়ে ভোটাভুটির আয়োজনের জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন, যা সম্ভবত ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া, মন্টানাতে আইনপ্রণেতারা নেকড়ে শিকারের সময়সীমা বাড়ানোর কথা ভাবছেন।

সংবাদ সংস্থা এপি সহ অন্যান্য সূত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে নেকড়েদের নিয়ে চলমান এই বিতর্ক অদূর ভবিষ্যতে আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *