সাহারা মরুভূমির বুকে, ৭০০০ বছর আগের এক প্রাচীন মানব বসতির রহস্য উন্মোচন করেছেন বিজ্ঞানীরা। আধুনিক ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা গেছে, এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দারা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক গোষ্ঠী, যাদের সম্পর্কে আগে কোনো ধারণা ছিল না।
সম্প্রতি, লিবিয়ার তাকারকোরি রক শেল্টারে পাওয়া দুটি নারীর কঙ্কাল থেকে বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণ জিনোম (জিনগত বৈশিষ্ট্য) পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। এই আবিষ্কার মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উন্মোচন করেছে।
তাকারকোরি রক শেল্টার, যা আধুনিক যুগে দুর্গম মরুভূমির মাঝে অবস্থিত, ৭০০০ বছর আগে ছিল সবুজে ঘেরা এক মনোরম স্থান। সেখানে ছিল গাছপালা, হ্রদ এবং নদীর উপস্থিতি, যা হাতি ও জলহস্তীর মতো বিশাল প্রাণীদের বসবাসের জন্য উপযুক্ত ছিল।
এই অঞ্চলে বসবাস করত আদি মানব সম্প্রদায়, যারা মাছ শিকার করত এবং ভেড়া ও ছাগল পালন করত।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ভালোভাবে সংরক্ষিত কঙ্কাল থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করা ছিল একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। কারণ গরম ও শুষ্ক পরিবেশে ডিএনএ সহজে নষ্ট হয়ে যায়।
তবে, জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভোলিউশনারি অ্যানথ্রোপলজির বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা গেছে, এখানকার মানুষেরা ছিল সম্পূর্ণভাবে একটি পৃথক গোষ্ঠী, যারা সম্ভবত কয়েক হাজার বছর ধরে এই অঞ্চলে বসবাস করত।
তাদের ডিএনএ অন্য কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে মেলেনি।
এই আবিষ্কার সাহারা অঞ্চলের প্রাগৈতিহাসিক মানুষের জীবনযাত্রা এবং অভিবাসন সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। আগে মনে করা হতো, এই অঞ্চলের মানুষজন সম্ভবত অন্য কোনো অঞ্চল থেকে এসেছিল এবং তাদের সংস্কৃতি এখানে ছড়িয়ে পড়েছিল।
কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, এখানকার মানুষ সম্ভবত বাইরের কোনো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যায়নি, বরং তারা নিজেদের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখেছিল। হয়তো সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ঘটেছিল, কিন্তু তাদের জিনগত বৈশিষ্ট্য ছিল নিজস্ব।
গবেষকরা আরও বলছেন, এই আবিষ্কার আমাদের মানবজাতির ইতিহাস এবং বিবর্তন সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। ভবিষ্যতে প্রত্নতাত্ত্বিক এবং জিনগত প্রমাণ একত্রিত করে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন