গাজায় ইসরায়েলি হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশু তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছে, যা আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ‘অনাথ সংকট’ তৈরি করেছে। ফিলিস্তিনের পরিসংখ্যান ব্যুরোর বরাত দিয়ে জানা যায়, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ শুরুর পর থেকে প্রায় ৩৯ হাজার ৩৮৪ জন শিশু তাদের অভিভাবক হারিয়েছে।
এদের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার শিশু রয়েছে, যারা গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে, অর্থাৎ ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে, বাবা-মা উভয়কেই হারিয়েছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ১৭ হাজার ৯৫৪ জন শিশু নিহত হয়েছে। নিহত শিশুদের মধ্যে রয়েছে নবজাতক শিশু এবং এক বছরের কম বয়সী ৮৭৬ জন শিশু।
এছাড়া, উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ১৭ জন শিশু তীব্র শীতের কারণে এবং অপুষ্টি ও খাদ্যাভাবে আরও ৫২ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো সতর্ক করে বলেছে, প্রায় ৬০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টির শিকার হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী শিশুদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে। গত ৭ই অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার পঞ্চান্ন জনের বেশি শিশুকে আটক করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই পশ্চিম তীরের বাসিন্দা।
বর্তমানে, ইসরায়েলের কারাগারে এখনো তিনশ’ জনের বেশি ফিলিস্তিনি শিশু বন্দী রয়েছে।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে সেখানকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য, জ্বালানি ও জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের মতে, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের ক্ষেত্রে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ অসহযোগিতা করছে, যা সেখানকার শিশুদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে। গাজার মিডিয়া অফিসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ইসরায়েল সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ‘গণহারে অনাহার’ তৈরির চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ফিলিস্তিনের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৩ শতাংশই শিশু ও ১৮ বছরের কম বয়সী কিশোর-কিশোরী। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে শিশুদের এই মানবিক বিপর্যয় গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা