কর্মব্যস্ত জীবনে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। প্রতিদিনকার ব্যস্ততায় শরীরচর্চার জন্য সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে, আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের জন্য এই কাজটি সহজ করে দিয়েছে। আজ আমরা আলোচনা করব এমন কিছু উদ্ভাবনী যন্ত্র নিয়ে, যা আপনার কর্মদিবসেও শরীরচর্চার সুযোগ তৈরি করে – ‘ছোট আকারের হাঁটার মেশিন’ বা আন্ডার-ডেস্ক ট্রেডমিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ১০,০০০ কদম হাঁটার পরামর্শ দেয়। আমাদের দেশেও চিকিৎসকেরা নিয়মিত হাঁটাচলার গুরুত্ব দেন।
নিয়মিত হাঁটা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। কিন্তু ব্যস্ত জীবনযাত্রায় বাইরে হাঁটার সময় বের করা কঠিন। এই সমস্যা সমাধানে হাঁটার মেশিন হতে পারে দারুণ কার্যকরী।
অফিসে বসে কাজ করার সময় অথবা সন্ধ্যায় টিভি দেখার সময়ও এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই ধরনের ছোট আকারের হাঁটার মেশিনগুলো সাধারণ ট্রেডমিলের চেয়ে হালকা ও ছোট হওয়ায় ব্যবহার করা এবং সংরক্ষণ করা সহজ। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ মিনিটের হাঁটা আপনাকে কয়েক হাজার কদম হাঁটার সুযোগ দিতে পারে।
এমনকি ঘন্টায় ৩ কিলোমিটার গতিতে হাঁটলে, আপনি অতিরিক্ত ২০০ থেকে ৩০০ ক্যালোরি পর্যন্ত ঝরাতে পারেন। যারা ওজন কমাতে চান বা শরীরের পেশি সুগঠিত করতে চান, তাদের জন্য এটি দারুণ উপকারী।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের হাঁটার মেশিন পাওয়া যায়। নিচে কয়েকটি মডেলের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা দেওয়া হলো:
১. **JTX MoveLight:** এই মডেলটি ভালো মানের এবং টেকসই। এর দাম প্রায় ৬৩,০০০ টাকা। এটিতে একটি বড় ডিসপ্লে, কুশনযুক্ত হাঁটার স্থান এবং শব্দহীন মোটর রয়েছে।
এটির সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ৬ কিলোমিটার। ওজন ২৯.৫ কেজি।
২. **Rattantree Shock-Absorbing Treadmill:** এটি একটি সাশ্রয়ী মূল্যের মডেল, যার দাম প্রায় ১৮,০০০ টাকা। এর নির্মাণশৈলী খুব উন্নত না হলেও, হালকা ও সহজে ব্যবহারযোগ্য।
এটির সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ১০ কিলোমিটার। ওজন ১৯ কেজি।
৩. **BodyMax WP60:** এই মডেলটি ভাঁজ করা যায়, যা স্থান বাঁচায়। এর দাম প্রায় ৭৬,০০০ টাকা। এটির স্বয়ংক্রিয় গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে।
এটির সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ৬ কিলোমিটার। ওজন ২৮ কেজি।
৪. **Mobvoi Home Treadmill Plus:** এই মডেলটিতে সামান্য ঢাল যুক্ত করার সুবিধা আছে। এর দাম প্রায় ৩১,০০০ টাকা। এটিতে ব্লুটুথ সংযোগ এবং শব্দ নির্গত করার ব্যবস্থা রয়েছে।
এটির সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ১২ কিলোমিটার। ওজন ২৪.৬ কেজি।
হাঁটার মেশিন কেনার আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত:
- **দাম:** আপনার বাজেট অনুযায়ী মডেল নির্বাচন করুন।
- **গুণমান:** ভালো মানের এবং টেকসই মেশিন কিনুন।
- **আকার ও ওজন:** আপনার ঘরের স্থান অনুযায়ী আকার নির্বাচন করুন।
- **বৈশিষ্ট্য:** আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী, যেমন – ঢাল যুক্ত করার সুবিধা, ব্লুটুথ সংযোগ, ইত্যাদি আছে কিনা দেখে নিন।
- **বিদ্যুৎ খরচ:** মেশিনটি কত বিদ্যুৎ খরচ করে, সে সম্পর্কে ধারণা রাখুন।
সাধারণত, একটি হাঁটার মেশিন ব্যবহার করলে বছরে প্রায় ১,০০০ টাকার মতো বিদ্যুৎ খরচ হতে পারে।
হাঁটার মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার দিকে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে পারেন। ঢাকার যানজটের কারণে যারা নিয়মিত হাঁটাচলার সুযোগ পান না, তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার সমাধান হতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian