বিশ্বকাপ-২০২৬: ঐক্যের বদলে কি বিভাজন?

শিরোনাম: ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপ: ঐক্য প্রতিষ্ঠার বদলে বিভেদের আশঙ্কা?

আগামী ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ, যা যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডায় যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে ফুটবল প্রেমীদের জন্য এক বিশাল আকর্ষণ। ৪৮টি দল এবং ১০৪টি ম্যাচের এই মেগা আসরটি ফুটবল ইতিহাসের বৃহত্তম বিশ্বকাপ হতে চলেছে।

তবে, খেলা শুরুর এখনো ১৫ মাসের বেশি সময় বাকি থাকতেই এই আয়োজন ঘিরে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। মূল উদ্বেগের কারণ হলো, আয়োজক দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক এবং লজিস্টিক্যাল কিছু সমস্যা, যা বিশ্বকাপের মূল উদ্দেশ্য—ঐক্য—প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

২০১৭ সালে যখন এই টুর্নামেন্টের আয়োজনের জন্য আবেদন করা হয়েছিল, তখন এর মূল সুর ছিল ‘ঐক্য’। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি বদলেছে।

বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক কিছু নীতি এই আয়োজনের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে মেক্সিকোর সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ এবং সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারের পরিকল্পনা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে তৈরি হয় উত্তেজনা।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপের মতো একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনে দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা কতটা বজায় থাকবে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে একাধিক দেশে যৌথভাবে টুর্নামেন্ট আয়োজনের নজির খুব বেশি নেই। ২০০২ সালের বিশ্বকাপে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যৌথভাবে আয়োজন করেছিল।

তবে, সেই আসরেও আয়োজক দেশগুলোর মধ্যে টিকিটের রাজস্ব ভাগাভাগি এবং টুর্নামেন্টের নামকরণে কার নাম আগে আসবে, এসব বিষয় নিয়ে মতবিরোধ দেখা গিয়েছিল।

বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বিবেচনা করছে। এই তালিকায় ইরানের নামও রয়েছে, যারা এরই মধ্যে টুর্নামেন্টের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে।

ভিসা জটিলতার কারণে অনেক ফুটবল ভক্তের খেলা দেখতে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, তুরস্ক ও কলম্বিয়ার মতো দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার জন্য আবেদন করলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে, যা টুর্নামেন্ট শুরুর সময়ের থেকেও বেশি।

আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, বিশ্বকাপের প্রস্তুতিমূলক কাজের বিকেন্দ্রীকরণ।

সাধারণত, ফিফা স্থানীয় একটি আয়োজক কমিটি তৈরি করে, যারা স্বাগতিক দেশগুলোর সরকার ও পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত থাকে।

কিন্তু এক্ষেত্রে ফিফা সরাসরি প্রতিটি শহরের ১৬টি আলাদা আয়োজক দলের মাধ্যমে কাজ করছে।

এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে, কারণ প্রতিটি শহরের নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন বিষয় স্থানীয়ভাবে দেখাশোনার দায়িত্ব তাদের।

তবে, ফিফা এবং আয়োজক দেশগুলো সবাই মিলে সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছে।

ফিফার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এই টুর্নামেন্টকে সফল করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

তাদের মূল লক্ষ্য হলো, এই আয়োজনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির মানুষকে একত্রিত করা এবং বিপুল পরিমাণ আর্থিক সুবিধা ও সুনাম অর্জন করা।

সবকিছু বিবেচনা করে, ২০২৬ বিশ্বকাপের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।

রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভিসা জটিলতা এবং লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা গেলে, এটি নিঃসন্দেহে একটি স্মরণীয় আসর হবে।

ফুটবলপ্রেমীরা অবশ্যই চাইবেন, মাঠের খেলা হোক আনন্দময়, আর মাঠের বাইরের সমস্যাগুলো দ্রুত মিটে যাক।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *