মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের ইউক্রেন বিষয়ক বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার সম্ভাবনা, বাড়ছে দ্বিধা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পেন্টাগনের শীর্ষ কর্মকর্তা, পেটে হেগসেথ আগামী সপ্তাহে ব্রাসেলসে ইউক্রেন বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সম্ভবত যোগ দেবেন না। ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে গঠিত ‘ইউক্রেন প্রতিরক্ষা যোগাযোগ গোষ্ঠী’র (Ukraine Defense Contact Group – UDCG) বৈঠকে এমন ঘটনা নজিরবিহীন।
এই গ্রুপটি প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম কোনো শীর্ষ মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার এতে অনুপস্থিত থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। খবরটি জানিয়েছে সিএনএন।
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পর ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ ত্বরান্বিত করতে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের উদ্যোগে এই গ্রুপের জন্ম হয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এই গ্রুপ থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে।
সাধারণত, এই গ্রুপের মাসিক বৈঠকে হয় লয়েড অস্টিন সভাপতিত্ব করতেন, অথবা পেন্টাগনের কোনো শীর্ষ কর্মকর্তা এই দায়িত্ব পালন করতেন।
কিন্তু বর্তমানে হেগসেথ সেই দায়িত্ব ব্রিটেনকে দিয়েছেন। যদিও এর মধ্যেই গত সপ্তাহে মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ জেনারেল আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, “যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনকে নিয়মিত সহায়তা করাটা রাশিয়ার উপর চাপ বজায় রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রাসেলসে ন্যাটো সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ইউডিসিজি বৈঠকে হেগসেথ অংশ নিয়েছিলেন।
সেই সময় তিনি মিত্র দেশগুলোকে জানান যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন থেকে ইউরোপের নিরাপত্তা রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করবে না। এমনকি তিনি এমনও মন্তব্য করেন যে, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়াটা “অসম্ভব”।
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছিল যে, ইউক্রেন একদিন এই জোটে যোগ দেবে, হেগসেথের এই মন্তব্য সেই অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল।
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যেই পরিবর্তন এনেছে।
তাদের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ছিল কিয়েভকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করা। রাশিয়া এখনো পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
এমনকি কৃষ্ণ সাগরে আংশিক যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রেও তারা বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রকাশ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করেন এবং রাশিয়ার তেল ক্রয়কারী দেশগুলোর উপর শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।
এর কয়েকদিন পরেই তিনি রাশিয়ার একজন প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ ও পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্রকে ওয়াশিংটনে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং তার উপর থেকে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন।
উল্লেখ্য, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর এই প্রথম কোনো রুশ কর্মকর্তা এ ধরনের আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে এলেন।
অন্যদিকে, যখন রুশ আলোচক কিরিল দিমিত্রিভ ওয়াশিংটনে ছিলেন, তখন মার্কিন ইউরোপীয় কমান্ডের প্রধান এবং ইউরোপে ন্যাটো মিত্রশক্তির সুপ্রিম কমান্ডার জেনারেল ক্রিস্টোফার ক্যাভোলি কংগ্রেসকে জানান, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের জন্য একটি “ক্রমবর্ধমান” হুমকি তৈরি করছে।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া “সারা ইউরোপ এবং তার বাইরে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।”
জেনারেল ক্যাভোলি আরও যোগ করেন, “ইউক্রেন যুদ্ধ, যা এখন চতুর্থ বছরে পড়েছে, তা প্রমাণ করেছে যে রাশিয়া একটি দীর্ঘমেয়াদী হুমকি।
আমরা দেখছি ভবিষ্যতে এটি আরও বাড়বে, এবং তারা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে দ্বিধা করবে না।”
মার্কিন ও পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করেন, রাশিয়া যুদ্ধবিরতি নিয়ে আন্তরিকভাবে আলোচনা করতে আগ্রহী নয়।
তাদের ধারণা, তারা এখনো যুদ্ধ চালিয়ে যেতে এবং ইউক্রেনকে পরাজিত করতে পারবে।
একজন ঊর্ধ্বতন ন্যাটো কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “রাশিয়া এখনো মনে করে সময় তাদের পক্ষে।”
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে জানতে চাচ্ছি, পুতিন কি আন্তরিকভাবে আলোচনা করতে চান?
রাশিয়া একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, আবার একই সময়ে তারা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবগুলো বিলম্বিত করছে এবং প্রত্যাখ্যান করছে।
আমার মনে হয়, এর থেকে বোঝা যায় রাশিয়ার লক্ষ্য এখনো পাল্টায়নি। তারা সম্ভবত এখন সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে, যাতে যুদ্ধের ক্ষেত্রে কম ছাড় দিতে হয় এবং নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাশিয়ার অবস্থান—এসব বিষয়ে সুবিধা আদায় করা যায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন