আলো ঝলমলে দ্বীপরাষ্ট্রে ‘অন্ধকার’: বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে চরম দুর্ভোগ!

প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র সামোয়ায় বিদ্যুতের বিভ্রাট এক গভীর সংকট তৈরি করেছে। দেশটির অধিবাসীরা কয়েক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন, যার ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় আপোলো দ্বীপে, অনেক বাসিন্দা রাতে কেরোসিনের বাতি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন এবং খাবার সংরক্ষণেও সমস্যা হচ্ছে।

রাজধানী আপিয়ার কাছাকাছি বসবাসকারী শেলী বুরিখ জানিয়েছেন, তার এলাকায় সপ্তাহে এক থেকে দু’রাত বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে সৌর টর্চ, লণ্ঠন ও মোমবাতির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের।

বুরিখের মতে, খাবার সংরক্ষণেও বেশ সমস্যা হচ্ছে। “আমরা অনেক খাবার নষ্ট করেছি এবং ফেলে দিতে হয়েছে।”

তবে তারা পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে শিখেছেন বলে জানান তিনি। “আমরা এখন তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খাই এবং তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাই। কোনোমতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফিয়াম নাউমি মাতা’আফা এক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।

তার মতে, এই সংকট পরিবার, ব্যবসা এবং জরুরি পরিষেবাগুলোর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সামোয়ায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দ্বীপজুড়ে দীর্ঘ সময় ধরে এমন লোডশেডিং আগে দেখা যায়নি।

কর্মকর্তারা বলছেন, এর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যান্ত্রিক ত্রুটি, ভূগর্ভস্থ তারের সমস্যা, সাম্প্রতিক ঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষতি এবং গত দুই বছরে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি।

বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা, ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন (ইপিসি) জানিয়েছে, তিনটি প্রধান জেনারেটরের ত্রুটির কারণে ১৬ই মার্চ থেকে আপোলো দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ সীমিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে কেবল লাইন মেরামতের কাজ চলছে এবং শনিবার পাঁচটি বড় জেনারেটর আসার কথা রয়েছে।

স্থায়ী জেনারেটরগুলো আগস্টে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর আশঙ্কা, এই সংকটের কারণে চলতি বছর দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি ১৬ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ফাসো’ওটাউলোয়া সাম সায়ালি বিদ্যুৎ পরিস্থিতিকে ব্যবসার জন্য “বিপর্যয়” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি জানান, কেবল উৎপাদন বন্ধ থাকাই নয়, অনেক ব্যবসায়িক যন্ত্রাংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুতের ভোল্টেজের কারণে তাদের ৮৪ শতাংশ সদস্য বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

ব্যবসায়ীরা জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা আরও বেশি অর্থনৈতিক সহায়তা পান।

দেশটির অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। নারিকেলজাত পণ্য, বনজ সম্পদ এবং মৎস্য ব্যবসা এখানকার প্রধান রপ্তানি খাত।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আপিয়ার একটি রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক গ্যারি জানান, “সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে আমাদের তিনবার দোকান বন্ধ করতে হয়েছে।” রেস্টুরেন্টটিতে একটি জেনারেটর থাকলেও, এটির পরিচালনা খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছে। জরুরি অবস্থা জারির ফলে সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবাগুলো স্বাভাবিক রাখতে পারবে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় বাসিন্দারাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, তারা এখন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখেছেন।

আপিয়ার একটি আইসক্রিম শপের ম্যানেজার, লেইলানি ফ্রুয়ান জানান, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে তাদের ডিপ ফ্রিজার কিনতে হয়েছে। বিদ্যুৎ আসার দিনগুলোতে আইসক্রিম শক্ত রাখার জন্য তাদের এই ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মোমবাতি, টর্চলাইট এবং ল্যাম্পের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কিছু এলাকায় দাম বেড়ে গেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সামোয়ান অবজার্ভার’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোমবাতির দাম ২৫ সামোয়ান তালা (প্রায় ২,৩০০ বাংলাদেশি টাকা)-তে পৌঁছেছে।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের এই সংকট সামোয়ার জনগণের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। তবে, সবাই মিলে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *