যুক্তরাষ্ট্রে হাম রোগের পুনরুত্থান: বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা।
গত কয়েক বছরে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাম রোগের প্রাদুর্ভাব নতুন করে দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রেও এই রোগের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, টেক্সাসে হাম রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে, এবং এই বছর আক্রান্তের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
হাম একটি অত্যন্ত সংক্রামক রোগ, যা বাতাসের মাধ্যমে দ্রুত ছড়াতে পারে। এই রোগের প্রধান শিকার হয় শিশুরা।
হাম হলে জ্বর, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, এবং শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। অনেক সময় রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে হামের এই পুনরুত্থানের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে টিকাকরণের অভাবকে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকাকরণের বিরুদ্ধে ভুল ধারণা এবং কিছু ক্ষেত্রে স্কুলগুলোতে ভ্যাকসিনেশন থেকে অব্যাহতি (exemption) চাওয়ার প্রবণতা এর পেছনে দায়ী।
এই অব্যাহতিগুলি মূলত ধর্মীয় বা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে হাম নির্মূলের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৬০-এর দশকে এই রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরী টিকা আবিষ্কারের ফলে দেশটিতে হামের প্রকোপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।
২০০০ সালে, যুক্তরাষ্ট্রকে হামমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে, টিকাকরণের হার কমে যাওয়ায় সম্প্রতি রোগটি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাম প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল টিকাকরণ। হামের দুটি ডোজ (dose) টিকা নিলে এই রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
টিকাকরণের মাধ্যমে একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি (herd immunity) তৈরি হয়, যা রোগের বিস্তার রোধ করতে সহায়ক। হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট জনসংখ্যার (সাধারণত ৯৫%) টিকা নেওয়া প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। আমাদের দেশেও হাম একটি পরিচিত সমস্যা, এবং শিশুদের মধ্যে এর সংক্রমণ এখনো দেখা যায়।
যদিও বর্তমানে হাম নির্মূলের লক্ষ্যে টিকাদান কর্মসূচি চলছে, তবে টিকাকরণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং ভুল ধারণা দূর করা জরুরি।
বাংলাদেশে টিকাকরণের হার বাড়ানো এবং হামের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের শিশুদের হাম রোগ থেকে রক্ষা করতে পারি এবং একটি সুস্থ জাতি গঠনে অবদান রাখতে পারি।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক