চিনের বাইরে, সুদূর আমেরিকাতেও যেন প্রাণের ছোঁয়া লেগেছে একটি সিনেমায়। সম্প্রতি, “নে ঝা ২” নামের একটি চীনা অ্যানিমেটেড সিনেমা, যা চীনে ইতিমধ্যেই ব্লকবাস্টার হিট, সেটি বিশাল পর্দায় উপভোগ করার জন্য একজোট হয়েছিলেন প্রবাসী চীনা নাগরিকরা। এই ঘটনার সূত্রপাত হয়, যখন আমেরিকার বিভিন্ন শহরে বসবাসকারী কিছু চীনা নাগরিক তাদের প্রিয় সিনেমাটি বড় পর্দায় দেখতে চেয়েছিলেন।
আর তাদের এই ইচ্ছাই জন্ম দেয় এক অভিনব উদ্যোগের।
বাল্টিমোর-ওয়াশিংটন ডিসি অঞ্চলের চীনা সম্প্রদায়ের কয়েকজন সদস্যের উদ্যোগে, একটি আইম্যাক্স (IMAX) সিনেমা হলে “নে ঝা ২” প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। এই আয়োজনে যোগ দেন শতাধিক মানুষ। এদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র, তরুণ পেশাজীবী, এমনকি পরিবারের সদস্যরাও, যারা তাদের সন্তানদের নিয়ে এসেছিলেন।
সিনেমা প্রেমীরা ঐতিহ্যবাহী চীনা পোশাকে সেজেছিলেন, কেউবা এসেছিলেন সিনেমার চরিত্রের সাজে। দর্শকদের মধ্যে ছিল উৎসবের আমেজ, যা তাদের সংস্কৃতি ও সিনেমার প্রতি ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আসলে, “নে ঝা ২” শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি চীনের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। চীনে নে ঝা-র চরিত্রটি খুবই পরিচিত।
তিনি একজন দেবশিশু, যিনি একই সঙ্গে স্বর্গীয় এবং দুষ্ট প্রকৃতির। সিনেমাটি চীনে এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, এটি মুক্তির পর “ইনসাইড আউট ২” -এর মতো জনপ্রিয় অ্যানিমেটেড সিনেমাকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে সিনেমাটির সেভাবে প্রচার হয়নি। আর তাই, এই সিনেমার প্রসারের জন্য প্রবাসী চীনারা একজোট হয়েছেন। তারা চেয়েছিলেন, তাদের সংস্কৃতি ও সিনেমা বিশ্বদরবারে পরিচিত হোক।
সান বোহান নামের বাল্টিমোরের এক ছাত্র, যিনি আইম্যাক্সে সিনেমাটি দেখতে চেয়েছিলেন, তিনিই এই আয়োজনের সূত্রপাত করেন। তিনি বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে একটি দল গঠন করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালান। এরপর, অনেকেই এগিয়ে আসেন এই উদ্যোগে সাহায্য করতে।
রে ইয়া নামের একজন তরুণী, যিনি এর আগে সিনেমাটি চারবার দেখেছেন, তিনি বিশেষভাবে এই আয়োজনে যুক্ত হন। তিনি একটি বিশেষ টিকিট তৈরি করেন, যেখানে ওয়াশিংটনের একটি বিখ্যাত স্থানে নে ঝার ছবি আঁকা ছিল।
তার মতে, “ছোট শহরে এমন আয়োজন সত্যিই বিরল, এবং আমি এতে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত।”
শুধু বাল্টিমোর নয়, নিউ ইয়র্ক, ইন্ডিয়ানাপলিস এবং বোস্টনের মতো শহরগুলোতেও একই ধরনের আয়োজন করা হয়েছিল। নিউ ইয়র্কে, মা রুয়োইউয়ান নামের একজন ফাইনান্স কর্মী, বন্ধুদের সাথে মিলে দুটি স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করেন, যেখানে প্রায় ৬০০ জন দর্শক সিনেমাটি উপভোগ করেন।
টিকিট বুকিং থেকে শুরু করে আসন নির্বাচন পর্যন্ত, সবকিছুতেই দর্শকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
তবে, আইম্যাক্স স্ক্রিন পাওয়াটা সহজ ছিল না। কারণ, উন্নতমানের এই পর্দাগুলোর জন্য প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোকে অনেক আগে থেকেই বুকিং দিতে হয়।
আইম্যাক্স কর্পোরেশন জানায়, তারা “নে ঝা ২” প্রদর্শনের জন্য সুযোগ তৈরি করেছে, তবে অন্যান্য সিনেমার প্রতি তাদের পূর্বের প্রতিশ্রুতিও তারা বজায় রেখেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের আয়োজনগুলো আমেরিকায় বসবাসকারী চীনা সম্প্রদায়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, যখন অভিবাসীদের প্রতি বিদ্বেষ বাড়ে, তখন এই ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো তাদের একত্রিত করে এবং নিজেদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সহায়তা করে।
“নে ঝা ২” সিনেমাটি চীনে দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন স্থানে এর বিশেষ প্রদর্শনী হয়েছে। চীনের শানডং প্রদেশের একটি আদালত তাদের কর্মীদের জন্য সিনেমাটির প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছিল, যা তাদের “আইনের শাসনের প্রতি বিশ্বাসকে শক্তিশালী করবে” বলে তারা উল্লেখ করেছে।
সবমিলিয়ে, “নে ঝা ২”-এর প্রেক্ষাপটে প্রবাসী চীনাদের এই উদ্যোগ তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি, বিশ্বজুড়ে নিজেদের সিনেমার পরিচিতি বাড়ানোর একটি দারুণ দৃষ্টান্ত। সান বোহানের মতে, “আমি একা শুরু করেছিলাম, কিন্তু বিভিন্ন দক্ষতা সম্পন্ন মানুষের সহায়তায় এটা সম্ভব হয়েছে। এই অভিজ্ঞতাটা সত্যিই মূল্যবান।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস