মিয়ানমারের ভূমিকম্প: এখনো ধ্বংসস্তূপের গন্ধ, স্বজন হারানোর কান্না!

মিয়ানমারের ভূমিকম্প: ধ্বংসস্তূপের নিচে স্বজন হারানোর বেদনা।

গত সপ্তাহে মিয়ানমারে শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল সাগাইং অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, যা ৩,১০০ ছাড়িয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেক মানুষ আটকা পড়ে আছেন।

তাদের উদ্ধারের জন্য স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা প্রাণপণে চেষ্টা চালাচ্ছেন, তবে সামরিক জান্তার কড়া নিয়ন্ত্রণ এবং গৃহযুদ্ধের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

সাগাইং শহরের চারপাশে তাকালে কেবল ধ্বংসের চিহ্ন দেখা যায়। বাড়িঘর, স্কুল, মন্দির, মসজিদ—সবকিছু মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ভূমিকম্পে রাস্তাঘাট ফেটে যাওয়ায় এবং সেতু ভেঙে পড়ায় দুর্গত অঞ্চলে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে খাবার পানি, আশ্রয়, ওষুধ এবং জরুরি স্বাস্থ্যবিধির অভাব দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভূমিকম্পের পর পরই মৃতদেহগুলো গণকবরে সমাহিত করার ব্যবস্থা করা হয়। জীবিতদের জন্য খাদ্য ও পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন মশা ও তীব্র গরমের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

এই ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘে মিয়ানমারের সাবেক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি’র মতে, “কেন মিন অং হ্লাইং উদ্ধার ও ত্রাণকাজে সামরিক সম্পদ ব্যবহার করছেন না? আমরা তো কেবল বেসামরিক নাগরিকদের ধ্বংসস্তূপ খুঁড়তে দেখছি।”

২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকেই সাগাইং অঞ্চল সামরিক বাহিনী ও গণতন্ত্রপন্থীদের মধ্যে এক বিশাল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সামরিক জান্তা এই অঞ্চলের বড় শহরগুলো নিয়ন্ত্রণ করলেও গ্রামগুলো বিভক্ত।

কিছু গ্রাম সামরিক বাহিনীর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে, আবার কিছু গ্রাম সাবেক নেত্রী অং সান সু চি’র অনুসারী। বিদ্রোহীদের দমনের নামে সামরিক বাহিনী প্রায়ই গ্রামগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ভূমিকম্পের পর সামরিক জান্তা সাময়িকভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোও জান্তার নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে সমস্যায় পড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত এগিয়ে আসা প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশের উচিত এই মানবিক বিপর্যয়ে মিয়ানমারের পাশে দাঁড়ানো এবং ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে সহায়তা করা।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *