বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে যক্ষ্মা (Tuberculosis – TB) রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলে শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্যেও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যক্ষ্মা একটি মারাত্মক রোগ যা দ্রুত ছড়াতে পারে।
WHO-এর তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় অঞ্চলে শিশুদের মধ্যে নতুন করে যক্ষ্মা শনাক্তের হার প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। শুধু ২০২৩ সালেই ১৫ বছরের কম বয়সী ৭,৫০০ শিশুর শরীরে এই রোগের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
এদের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় ২,৪০০ জন। শিশুদের মধ্যে যক্ষ্মা রোগের বিস্তার তাদের মারাত্মক অসুস্থতা বা মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশ্বজুড়ে যক্ষ্মা রোগের বিস্তার রোধে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে আসায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র অতীতে WHO-কে নিয়মিত আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছিল।
কিন্তু বর্তমানে সেই সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা হয়েছে। এই কারণে অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
যক্ষ্মা একটি বায়ুবাহিত রোগ, যা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা কথা বলার মাধ্যমে সহজে ছড়াতে পারে। ফুসফুস প্রধানত এই রোগে আক্রান্ত হয়।
রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো—দীর্ঘদিন ধরে কাশি, জ্বর, ওজন হ্রাস এবং রাতে ঘাম হওয়া।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় দীর্ঘমেয়াদী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হয়, যা সাধারণত ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত চলতে পারে।
অনেক সময়, চিকিৎসার পরেও রোগটি আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া, মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষ্মা (MDR-TB) একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ, কারণ এই ক্ষেত্রে প্রচলিত ওষুধগুলি রোগীর শরীরে কাজ করে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগের বিস্তার রোধ করতে হলে দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং সময় মতো চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। একইসঙ্গে, চিকিৎসা সম্পূর্ণ করাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ চিকিৎসা অসম্পূর্ণ থাকলে রোগটি আবারও ফিরে আসতে পারে এবং ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই খবরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের দেশে যক্ষ্মা একটি পরিচিত সমস্যা।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। দরিদ্রতা, ঘনবসতি এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতার অভাব—এসব কারণে যক্ষ্মা রোগের বিস্তার এখানে বেশি।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রোগের দ্রুত শনাক্তকরণ এবং বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরকার যক্ষ্মা নির্মূলে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। রোগের বিস্তার কমাতে হলে, সবার আগে এর লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়া, চিকিৎসার পুরো সময় ওষুধ সেবন করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা অপরিহার্য।
যক্ষ্মা প্রতিরোধের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন