ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার জেরে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা, মার্কিন বাজারে বড় পতন।
আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি ঘোষণার পর বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এই ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে এবং এর ফলে একটি সম্ভাব্য মন্দার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শেয়ার সূচকগুলো গত পাঁচ বছরের মধ্যে একদিনে সবচেয়ে বড় পতন দেখেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, তার শুল্ক নীতির কারণে বাজার ‘বুম’ করবে। কিন্তু বাস্তবে, বাজারে এর বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।
শেয়ার বাজারের এই দরপতনের পেছনে প্রধান কারণ হলো বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শুল্ক নীতি নিয়ে উদ্বেগ। বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজার থেকে প্রায় ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ হারিয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, অন্যান্য দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রধান তিনটি সূচকই ২০২০ সালের জুন মাসের পর থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে নেমে এসেছে। প্রযুক্তি নির্ভর নাসডাক সূচক ৬ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এছাড়া, এস অ্যান্ড পি ৫০০ এবং ডাও জোন্স-এর পতন হয়েছে যথাক্রমে ৪.৮ শতাংশ এবং ৩.৯ শতাংশ। অ্যাপল এবং এনভিডিয়া, যা বাজারের মূলধনের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম, তাদের সম্মিলিতভাবে প্রায় ৪৭০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপও বাড়ছে। রিপাবলিকান সিনেটররা ইতোমধ্যে এই শুল্ক নীতিকে ‘খারাপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
অন্যদিকে, পেন্টাগনের পক্ষ থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিবের একটি তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তিনি সংবেদনশীল সামরিক তথ্য আদান প্রদানে ‘সিগনাল’ নামক একটি এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করেছেন। জানা গেছে, তিনি ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলার বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান করেছেন।
হোয়াইট হাউজে এক অস্বাভাবিক বৈঠকের পর ট্রাম্প তার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কয়েকজন কর্মীকে বরখাস্ত করেছেন। সেই বৈঠকে চরম ডানপন্থী কর্মী লরা লুউমার কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে তারা প্রেসিডেন্টের প্রতি অনুগত ছিলেন না।
এছাড়াও, ড. মেহমেত ওজ-কে মেডিকেয়ার ও মেডিকেইড বিভাগের প্রধান হিসেবে নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি এই পদে আসার পর কংগ্রেস মেডিকেইড প্রোগ্রামে কাটছাঁট করার বিষয়ে আলোচনা করছে, যা দরিদ্র ও অক্ষম আমেরিকানদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে থাকে।
যুক্তরাজ্যের একটি আদালত সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আইনি খরচ বাবদ ৮ লাখ ২০ হাজার ডলার পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে। ২০১৬ সালের একটি প্রতিবেদনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘বিকৃত’ যৌন কার্যকলাপের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এই অভিযোগের সঙ্গে জড়িত একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে হেরে যাওয়ার পর আদালত এই নির্দেশ দেয়।
এছাড়াও, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা নিয়ে সিনেটরদের মধ্যে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে তাদের ক্ষমতা ফিরে পেতে চাইছেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের ‘অযৌক্তিক’ শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় তারা মার্কিন যানবাহনের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান