আর্কল, আয়ারল্যান্ডের একটি ছোট্ট শহর। এখানকার সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে আছে এক অত্যাশ্চর্য কাঠামো, যা দেখলে হয়তো অনেকেই প্রথমে বুঝতে পারবেন না যে এটি আসলে একটি পয়ঃনিষ্কাশন প্ল্যান্ট।
প্রায় ১৩৯ মিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ১,৬০০ কোটি টাকার বেশি) ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পটি শুধু প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের জন্যেই নয়, বরং এর নান্দনিক রূপের কারণেও বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আর্কল শহরটি ডাবলিন থেকে প্রায় ৪৫ মাইল দূরে অবস্থিত। অতীতে এখানকার ১৩,৫০০ জন বাসিন্দার পয়ঃপ্রণালী সরাসরি অ্যাভোকা নদীতে ফেলা হতো, যা গিয়ে পড়ত সমুদ্রে।
স্বাভাবিকভাবেই, এতে পরিবেশ দূষণ হতো এবং স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্যহানিরও আশঙ্কা ছিল। ইউরোপীয় কমিশন বিষয়টি নজরে আনে এবং আয়ারল্যান্ডকে বারবার সতর্ক করে।
অবশেষে, দীর্ঘ কয়েক দশকের প্রচেষ্টার পর, একটি আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন প্ল্যান্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আর্কিটেক্ট ক্ল্যান্সি মুর-এর ডিজাইন করা এই প্ল্যান্টটিকে “ক্যাথেড্রাল অফ ক্র্যাপ” বা “নোংরার ক্যাথেড্রাল” নামেও অভিহিত করা হয়। এর প্রধান কারণ হলো, এই প্ল্যান্টটির স্থাপত্যশৈলী।
সাধারণত, পয়ঃনিষ্কাশন প্ল্যান্টগুলি হয়Functionাল এবং দৃষ্টিকটু। কিন্তু আর্কলের এই প্ল্যান্টটি ব্যতিক্রম।
দুটি বিশাল সবুজ রঙের কাঠামো, যা সমুদ্রগামী জাহাজের মতো দেখতে, রাতের বেলা মৃদু আলো ছড়ায়। এর ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে, যা একদিকে যেমন কার্যকরী, তেমনই পরিবেশের সঙ্গেও মিশে যায়।
ছাদের বিশেষ ডিজাইন বাতাস চলাচলের সুবিধা দেয় এবং বাদুড়ের বাসস্থান তৈরিতেও সাহায্য করে।
প্ল্যান্টের ভেতরের প্রক্রিয়াটিও অত্যন্ত আধুনিক। এখানে বর্জ্য জলকে শোধন করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। জলের প্রবাহকে আরও কার্যকর করতে একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিদ্যুতের ব্যবহার কমায়।
এছাড়াও, প্ল্যান্টটিতে সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে, যা এর প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে।
এই প্রকল্পের দীর্ঘ পথচলা সহজ ছিল না। শুরুতে স্থান নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়, যা প্রায় এক দশক ধরে চলেছিল।
অবশেষে, একটি উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা হয় এবং প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পের সাফল্যের পেছনে ছিল স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা এবং আধুনিক স্থাপত্যের সমন্বয়।
এই ধরনের প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হতে পারে। আমাদের দেশেও বিভিন্ন শহরে নদীর জল দূষণের সমস্যা রয়েছে।
বুড়িগঙ্গা সহ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর দূষণ কমাতে হলে আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। আর্কলের এই প্ল্যান্টটি প্রমাণ করে যে, সঠিক পরিকল্পনা ও নকশার মাধ্যমে পয়ঃনিষ্কাশন কেন্দ্রকেও নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব করে তোলা সম্ভব।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান