**শ্রীলঙ্কায় মাইন মুক্ত করার পরিকল্পনা: মার্কিন সাহায্য পর্যালোচনায় অনিশ্চয়তা**
যুদ্ধবিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কায় মাইন অপসারণের একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে দেশটি। ২০২৮ সালের মধ্যে মাইন মুক্ত হওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা তারা নির্ধারণ করেছে, তা এখন ঝুঁকির মুখে।
এর কারণ, দেশটির মাইন অপসারণ প্রকল্পে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে। খবর সূত্রে জানা যায়, এই সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে কয়েক হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।
শ্রীলঙ্কায় কয়েক দশক ধরে চলা জাতিগত সংঘাতের কারণে দেশটির উত্তরাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মাইন পুঁতে রাখা হয়েছিল। এই মাইনগুলো এখনো সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে আছে।
মাইন অপসারণের কাজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং সময়সাপেক্ষ। এই কাজে যারা যুক্ত, তাদের জীবনও ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন থাভারাতনাম পুষ্পরানি।
একসময় তিনি তামিল টাইগারদের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন, কিন্তু এখন তিনি মাইন অপসারণের মতো কঠিন কাজ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে শ্রীলঙ্কার মাইন অপসারণে প্রধান সাহায্যকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার দেওয়া প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাই দিয়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ।
গত বছর এই অনুদানের পরিমাণ ছিল ৪৫ শতাংশ। তবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সাহায্য পর্যালোচনা করার কারণে এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
মাইন অপসারণের কাজটি মূলত ২০০২ সাল থেকে শুরু হয়েছিল, যখন যুদ্ধবিরতি চলছিল। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ লক্ষেরও বেশি মাইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য অপসারণ করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের সাথে জড়িত কর্মীরা জানিয়েছেন, সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এরই মধ্যে কিছু সংস্থা কর্মী ছাঁটাই করতে শুরু করেছে।
মাইন বিস্ফোরণে আহত হওয়া কুমারা কুলসিংহাম দিনোjan-এর কথায়, “ছোটবেলায় জঙ্গলে পাওয়া একটি ধাতব পাত্র খুলতে গিয়েই আমার এই পরিণতি হয়।” দিনোjan-এর ভাই ভিলভারাজ বিনোথানও মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়েছিলেন।
তাঁদের মতো আরও অনেকে মাইন বিস্ফোরণে অঙ্গ হারিয়েছেন এবং অনেকে মারা গেছেন।
মাইন অপসারণের কাজটি শুধু একটি প্রকল্পের নাম নয়, এটি সেখানকার মানুষের জীবন পরিবর্তনেরও একটি প্রক্রিয়া। পুষ্পরানির মতো বহু মানুষ এই কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করেন।
এই প্রকল্পের ওপর দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। তাই, যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য অব্যাহত রাখাটা অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাইন অপসারণের কাজটি সফল করতে হলে আন্তর্জাতিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। একইসঙ্গে, আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন এবং তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করতেও পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস