ফিলিস্তিনের রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত ১৫ জন ত্রাণকর্মীর মধ্যে কয়েকজনকে সম্ভবত ‘ফাঁসি দেওয়ার মতো’ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। নিহতদের মরদেহ পরীক্ষা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
গত সপ্তাহে রাফার তাল আস-সুলতান এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হন এই ১৫ জন ত্রাণকর্মী। এদের মধ্যে ৯ জন ছিলেন ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) কর্মী, ৬ জন সিভিল ডিফেন্স কর্মী এবং ১ জন জাতিসংঘের কর্মচারী। পিআরসিএস এই ঘটনাকে যুদ্ধের ‘সবচেয়ে ভয়াবহ মুহূর্তগুলোর একটি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে নিহতদের পাঁচজনের মরদেহ পরীক্ষা করা ফরেনসিক বিশ্লেষক আহমেদ দাহের জানিয়েছেন, মরদেহ পরীক্ষার প্রাথমিক ফলাফলে বোঝা যাচ্ছে, তাঁদের কাছ থেকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। তাঁর মতে, গুলিগুলো নির্দিষ্ট স্থানে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে।
তিনি জানান, ‘একটি গুলির ক্ষত পাওয়া গেছে একজনের মাথায়, আরেকজনের বুকে এবং তৃতীয় ব্যক্তির শরীরে ছয় থেকে সাতটি গুলির চিহ্ন ছিল।’ তবে, মরদেহগুলো পচে যাওয়ায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা কঠিন বলেও জানান তিনি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক বলেছেন, নিহত ত্রাণকর্মীদের ঘটনায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি নতুন করে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। তিনি এই ঘটনার একটি ‘স্বাধীন, দ্রুত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের’ আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ২৩শে মার্চ রাফায় উদ্ধার তৎপরতা চালানোর সময় ত্রাণকর্মীরা নিখোঁজ হন। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক দপ্তর (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, প্রথম উদ্ধারকারী দলের নিহত হওয়ার পর, তাঁদের খুঁজতে যাওয়া অন্য দলগুলোর ওপরও কয়েক ঘণ্টা ধরে হামলা চালানো হয়।
এক সপ্তাহ পর বালুর নিচে পুঁতে রাখা অবস্থায় ১৫ জনের মরদেহ পাওয়া যায়, যা ওসিএইচএ ‘গণকবর’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। পিআরসিএস-এর একজন কর্মী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে পিআরসিএস প্রেসিডেন্ট ইউনেস আল-খতিব এই ঘটনাকে মানবিকতার জন্য ‘এক চরম আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি আরও জানান, পিআরসিএস কর্মীরা ইসরায়েলি বাহিনী এবং কিছু ত্রাণকর্মীর মধ্যে হিব্রু ভাষায় কথোপকথন শুনেছিলেন, যা থেকে বোঝা যায়, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ইসরায়েলি হেফাজতে জীবিত ছিলেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, উদ্ধারকারী দলের অ্যাম্বুলেন্সে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের নয়জন যোদ্ধা ছিল। তবে, তারা এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বলেও জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক বলেছেন, এই ঘটনা যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় চলমান যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪০৮ জন ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৮০ জন জাতিসংঘের কর্মী।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা