মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ)-এর পরিচালক জেনারেল টিম হগকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় ডেমোক্রেট দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, এমন সিদ্ধান্ত দেশের নিরাপত্তা দুর্বল করবে। বৃহস্পতিবার (অনুমান) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, জেনারেল হগ একইসঙ্গে মার্কিন সাইবার কমান্ডেরও প্রধান ছিলেন। সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক কার্যক্রমের সমন্বয় করে থাকে এই কমান্ড।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনএসএ-এর ডেপুটি ডিরেক্টর ওয়েন্ডি নোবলকেও তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন সিনেটের ইন্টেলিজেন্স কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “জেনারেল হগ দেশের জন্য ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে অত্যন্ত সম্মান ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে যখন যুক্তরাষ্ট্র নজিরবিহীন সাইবার হুমকির সম্মুখীন, তখন তাকে সরিয়ে দেওয়া কিভাবে আমেরিকানদের নিরাপত্তা দেবে?”
অন্যদিকে, হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির র্যাঙ্কিং সদস্য জিম হাইমসের মতে, এই সিদ্ধান্ত তাকে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ করেছে।
তিনি বলেন, “আমি জেনারেল হগকে একজন সৎ ও স্পষ্টভাষী নেতা হিসেবে জানি, যিনি সবসময় দেশের নিরাপত্তা সবার আগে রেখেছেন এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।
আমার ভয় হচ্ছে, সম্ভবত এই গুণগুলোর কারণেই তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো।”
হাইমস আরও যোগ করেন, “এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইন্টেলিজেন্স কমিটি এবং আমেরিকান জনগণের দ্রুত একটি ব্যাখ্যা প্রয়োজন, যা আমাদের সবাইকে আরও অরক্ষিত করে তুলবে।”
জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তা বিষয়ক পরিষদের কয়েকজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন।
এর একদিন আগে কট্টর ডানপন্থী কর্মী লরা লুমারের সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ হয়।
লুমারের অভিযোগ ছিল, ওই কর্মকর্তাদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি আনুগত্যের অভাব রয়েছে।
ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে মিয়ামির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সবসময় এমন কিছু লোককে সরিয়ে দিচ্ছি, যাদের আমরা পছন্দ করি না অথবা যারা কাজটি করতে পারে না অথবা যাদের অন্য কারো প্রতি আনুগত্য রয়েছে।”
জেনারেল হগকে বরখাস্তের এই সিদ্ধান্তের কয়েকদিন আগে, ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ-এর পদত্যাগের দাবি ওঠে।
তিনি একটি এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে ইয়েমেনে হাউছি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন।
সিনেটর ওয়ার্নার আরও বলেন, “এটা খুবই আশ্চর্যের বিষয় যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার একজন অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ প্রধানকে বরখাস্ত করছেন, অথচ তার টিমের কেউ যখন একটি বাণিজ্যিক মেসেজিং অ্যাপে গোপন তথ্য ফাঁস করছেন, তখনও তিনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
এমনকি, তিনি ওভাল অফিসে বসে একজন বিতর্কিত ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকের কাছ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক পরামর্শ নিচ্ছেন।”
উল্লেখ্য, গত মাসে জেনারেল হগের সঙ্গে ইলন মাস্কের একটি বৈঠক হয়।
মাস্কের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ বা ডজ নামের একটি সংস্থা বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় কর্মী ও বাজেট কমাচ্ছে, যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এনএসএ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল, নতুন প্রশাসনের অগ্রাধিকারের সঙ্গে উভয় সংস্থার কার্যক্রম ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ’ রাখা।
জেনারেল হগ ২০১৩ সাল থেকে এনএসএ এবং সাইবার কমান্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এই দুটি বিভাগ দেশের সাইবার নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এছাড়া, এনএসএ বিশ্বজুড়ে বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে সামরিক বাহিনীসহ অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাকে সহায়তা করে।
সাইবার কমান্ড সাইবার স্পেসে আমেরিকার প্রথম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সাইবার হামলা পরিকল্পনার দায়িত্বও তাদের ওপর ন্যস্ত।
সম্প্রতি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ রাশিয়া-বিরোধী কিছু সাইবার কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের গোয়েন্দা কার্যক্রমের রূপান্তরের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান