বিখ্যাত লেখক অ্যান্টনি হোরোভিটজ, যিনি তাঁর রহস্য উপন্যাস এবং কিশোর সাহিত্যের জন্য পরিচিত, সম্প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত পাঠাভ্যাস এবং সাহিত্যচর্চা নিয়ে কথা বলেছেন। বইয়ের জগৎ তাঁর জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলেছে, সেই বিষয়ে কিছু মূল্যবান অভিজ্ঞতা তিনি জানিয়েছেন।
ছোটবেলায় কমিকস পড়ার মাধ্যমেই তাঁর বই পড়ার শুরু। ‘ভ্যালিয়েন্ট’ ছিল তাঁর প্রথম পছন্দের একটি কমিকস, যা তাঁকে স্কুলের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দিত। এরপর তিনি পিটার ও’ডনেলের ‘মডেস্টি ব্লেইজ’-এর মতো চরিত্রদের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই বইটি ছিল তাঁর পরিবারের একসঙ্গে সময় কাটানোর অন্যতম উপায়।
হোরোভিটজের মতে, একটি বই যা তাঁর জীবন বদলে দিয়েছিল, সেটি হল এল.পি. হার্টলির ‘দ্য গো-বিটুইন’। এই বইটি হালকা ঘরানার উপন্যাস থেকে তাঁকে গভীর সাহিত্যের দিকে আকৃষ্ট করে। তাঁর কৈশোরের বিষণ্ণতা নিয়ে প্রশ্ন জাগিয়েছিল এই বই, যা তাঁকে জীবনের প্রতি আরও যত্নবান হতে শিখিয়েছিল।
হোরোভিটজ মনে করেন, ছোট গল্পের প্রতি তাঁর সবসময় একটা অনীহা ছিল। তিনি সেগুলোকে অসম্পূর্ণ এবং অতৃপ্তিকর মনে করতেন। কিন্তু মার্ক হ্যাডনের ‘দ্য পিয়ার ফলস’-এর নয়টি অসাধারণ গল্প তাঁর সেই ধারণা পরিবর্তন করে দেয়।
লেখকের হওয়ার স্বপ্ন কীভাবে তৈরি হল, সেই বিষয়ে বলতে গিয়ে হোরোভিটজ জানান, ১০ বছর বয়সে তিনি লেখক হতে চেয়েছিলেন। ১৭ বছর বয়সে ‘দ্য কমপ্লিট অ্যাডভেঞ্চারস অফ শার্লক হোমস’ পড়ার পর তিনি বুঝতে পারেন, তিনি ক্রাইম রাইটার হবেন। আর্থার কোনান ডয়েলের লেখা তাঁকে রহস্য, কৌতূহল এবং হত্যার জগত সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছিল।
চার্লস ডিকেন্সের লেখা নিয়ে তাঁর প্রথম অভিজ্ঞতা খুব সুখকর ছিল না। ‘হার্ড টাইমস’ বইটি তাঁকে কিছুদিনের জন্য ডিকেন্স থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল। তবে পরবর্তীতে ইস্তাম্বুলে থাকার সময় তাঁর বন্ধুর বাবার আগ্রহে তিনি ‘গ্রেট এক্সপেকটেশনস’ পড়েন এবং এরপর থেকে ডিকেন্সের লেখার অনুরাগী হয়ে ওঠেন।
কিছু বই আছে যা তিনি পুনরায় পড়তে চান না। কারণ, তিনি ভয় পান, সম্ভবত এখন সেই বইগুলো তাঁর ভালো নাও লাগতে পারে। টি.এইচ. হোয়াইটের ‘দ্য ওয়ান্স অ্যান্ড ফিউচার কিং’ তেমনই একটি বই। পিটার জ্যাকসনের সিনেমাগুলো দারুণ হলেও, ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’ও তাঁর সেই তালিকায় রয়েছে।
পরবর্তীতে তিনি ফিলিপ লার্কিনের কবিতা পড়া শুরু করেন এবং তাঁর ‘দ্য হুইটসান ওয়েডিংস’ বইটি তাঁর ভালো লাগে। এমনকি এখন তিনি প্রতিদিন সকালে কবিতা পড়ার চেষ্টা করেন। তাঁর মতে, খবর শোনার চেয়ে কবিতা পড়া দিনের শুরুটা অনেক ভালো।
বর্তমানে তিনি লরেন্স রীসের ‘দ্য নাৎসি মাইন্ড’ বইটি পড়ছেন, যেখানে নাৎসিবাদের উত্থান এবং হলোকস্টের মনস্তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও লেখক সরাসরি কোনো তুলনা করেননি, বইটি বর্তমান বিশ্বের পরিস্থিতি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে। তাই বইটি পড়ার পর ভয় পেতেও পারেন।
তাঁর প্রিয় বইগুলোর মধ্যে রয়েছে জেন অস্টেন, ব্রন্টির রচনা, টমাস হার্ডি, অ্যান্টনি ট্রলপ, জর্জ গিসিং-এর মতো লেখকদের বই। যদিও এই গল্পগুলো সবসময় সুখের নয়, তবুও তিনি মনে করেন, এখানে সবকিছু যেন নিয়ম মেনেই ঘটে।
বর্তমানে অ্যান্টনি হোরোভিটজের নতুন বই ‘মার্বেল হল মার্ডার্স’ প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান