ধ্বংসের পথে শেফিল্ড বুধবার? মালিকের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ সমর্থকরা!

শেফিল্ড ওয়েডনসডে ক্লাবের আর্থিক দুর্দশা, মালিকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন। ইংলিশ ফুটবল ক্লাব শেফিল্ড ওয়েডনসডের খেলোয়াড়দের বেতন পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় ক্লাবটি এখন গভীর আর্থিক সংকটে পড়েছে।

ক্লাবটির মালিক ডেফন চানসির ব্যবস্থাপনার কড়া সমালোচনা করছেন সমর্থকরা। এমন পরিস্থিতিতে ক্লাবটির ভবিষ্যৎ নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

ব্রিটিশ গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মার্চ মাসের শেষে খেলোয়াড়দের বেতন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর ক্লাবটির এই সংকট আরও বাড়ে। এই ঘটনা শেফিল্ড ওয়েডনসডে সমর্থকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে চানসির মালিকানা নিয়ে হতাশ।

বেতন পরিশোধে বিলম্ব হলে ক্লাবটির ওপর আরও কঠিন শাস্তির খড়গ নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ইংলিশ ফুটবল লীগ (EFL) ক্লাবটির বিরুদ্ধে জরিমানা, খেলোয়াড় কেনাবেচায় নিষেধাজ্ঞা অথবা পয়েন্ট কাটার মতো পদক্ষেপ নিতে পারে।

২০১৫ সাল থেকে ক্লাবটির মালিকানার দায়িত্বে থাকা চানসি এর আগে বিভিন্ন সময়ে ক্লাবের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সমালোচিত হয়েছেন। এর আগে সময়মতো কর পরিশোধ করতেও ব্যর্থ হয়েছিল ক্লাবটি।

২০২০ সালে ইএফএল-এর নিয়ম ভাঙার কারণে তাদের ৬ পয়েন্ট কর্তন করা হয়েছিল। এমনকি, গত বছর হিলসবোরোতে আসা কিছু দর্শকের বিরুদ্ধে ভুয়া জার্সি পরে আসার অভিযোগ উঠেছিল।

২০২৩ সালে চানসি ভক্তদের সমালোচনার মুখে ক্লাবটিতে অর্থ সরবরাহ বন্ধ করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন।

শেফিল্ড ওয়েডনসডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “বর্তমান আর্থিক সংকটের মূল কারণ হলো চেয়ারম্যানের ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ পাওনা রয়েছে।” চানসি যদিও নিয়মিতভাবে ক্লাবটিতে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন, প্রতি মাসে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন পাউন্ড (সে সময়ে প্রায় ৫০ কোটি বাংলাদেশী টাকা) করে তিনি দিয়েছেন।

কিন্তু ক্লাবটির আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। মালিকানা গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি ১৪ লক্ষ পাউন্ড (প্রায় ২ হাজার ১৬০ কোটি বাংলাদেশী টাকা) ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ক্লাবটি।

এমন পরিস্থিতিতে সমর্থকরা জানতে চান, ক্লাবটিকে টিকিয়ে রাখতে চানসির কাছে পর্যাপ্ত অর্থ আছে কিনা। শনিবার হালের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলার আগে তারা এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে চাইছে।

ক্লাবের বর্তমান ঋণ প্রায় ৬৮ মিলিয়ন পাউন্ড (৯৭০ কোটি টাকার বেশি)।

শেফিল্ড ওয়েডনসডে সাধারণত বছরের শুরুতে, বড়দিনের সময় তাদের সিজন টিকিট বিক্রি করে থাকে। ফলে বছরের শুরুতে তাদের হাতে ভালো অংকের একটা নগদ অর্থ আসে।

এরপরও খেলোয়াড়দের বেতন দিতে সমস্যা হওয়ায় অনেকে বিস্মিত। ক্লাবের সমর্থক সংগঠন, শেফিল্ড ওয়েডনসডে সাপোর্টার্স ট্রাস্ট ক্লাব পরিচালনার পদ্ধতির সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে।

তারা জানতে চেয়েছে, ক্লাব কিভাবে ভবিষ্যতে এই ধরনের সমস্যাগুলো এড়াতে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।

চানসির মালিকানায় গত এক দশকে ক্লাবের পারফরম্যান্সে মিশ্র ফল দেখা গেছে। শুরুতে খেলোয়াড়দের পেছনে প্রচুর অর্থ খরচ করা হয়েছিল। তার মালিকানার প্রথম মৌসুমে দলটি প্লে-অফ ফাইনালে উঠলেও হেরে যায়।

এরপর শীর্ষ লিগে যাওয়ার লক্ষ্যে খেলোয়াড় কেনা বাবদ ক্লাব রেকর্ড ভেঙে অর্থ খরচ করা হয়, কিন্তু আকাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি। ২০২১ সালে দল অবনমনের শিকার হলে, বাজেট কমাতে হয়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ড্যানি রলের কোচ হিসেবে নিয়োগের আগে দলটি আবারও তৃতীয় বিভাগে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে ছিল।

ড্যানি রলের কোচিংয়ে দল ভালো খেলছে, তবে তাকে হয়তো গ্রীষ্মে ক্লাব ছাড়তে হতে পারে। সমর্থকদের কাছে রলের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।

তাদের মতে, রল কার্যত কোনো অর্থ ও বিনিয়োগ ছাড়াই দলকে ভালো অবস্থানে এনেছেন। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের মানও তিনি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছেন।

ফুটবল বিশ্বে শেফিল্ড ওয়েডনসডেকে বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় একটি জায়গা হিসেবে দেখা হয়। ক্লাবটির বিশাল সংখ্যক সমর্থক এবং স্টেডিয়াম এটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

তবে, ক্লাবটির স্টেডিয়াম হিলসবোরো, চানসির মালিকানাধীন একটি কোম্পানির অধীনে। তাই নতুন কোনো বিনিয়োগকারী আসলে, তাকে স্টেডিয়ামের বিষয়েও একটি সমাধানে আসতে হবে।

বিষয়টি নিয়ে চানসির সঙ্গে আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান আসেনি। তবে সমর্থকদের মধ্যে ভবিষ্যতের উদ্বেগ বাড়ছে এবং ক্লাবের জন্য এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় চলছে।

মাঠের বাইরের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা জরুরি, সেটা চানসির মাধ্যমেই হোক বা নতুন কারো হাত ধরেই হোক।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *