আকাশে ওড়ার অভিজ্ঞতা সবসময় একইরকম থাকে না, কিন্তু বিমানের ওড়া-নামার সময়ে কিছু বিশেষ মুহূর্ত থাকে যখন নিরাপত্তা নিয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয়। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় উড়োজাহাজের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে, যা অনেক যাত্রীকেই উদ্বেগে ফেলেছে।
যদিও আমরা প্রায়ই শুনি যে উড়োজাহাজে ভ্রমণ করা সবচেয়ে নিরাপদ, তবুও কিছু ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে এখানেও কিছু বিপদ লুকিয়ে আছে। বিমান বিশেষজ্ঞ এবং পাইলটদের মতে, এই বিপদগুলো সাধারণত বিমানের ওড়া এবং নামার সময়ে বেশি দেখা যায়।
সম্প্রতি হওয়া কয়েকটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (NTSB) এবং ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) তদন্ত শুরু করেছে।
গত ২৯শে জানুয়ারী, ওয়াশিংটন ন্যাশনাল বিমানবন্দরে একটি প্রশিক্ষণ মিশনে থাকা ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সাথে একটি আমেরিকান এয়ারলাইন্সের আঞ্চলিক বিমানের সংঘর্ষ হয়, যখন বিমানটি অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এর কয়েকদিন পরেই, হিউস্টন থেকে নিউ ইয়র্কগামী ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে উড্ডয়নের আগে ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায় এবং দ্রুত যাত্রীদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
এছাড়াও, খ্যাতিমান শিল্পী ভিন্স নীল-এর মালিকানাধীন একটি ব্যক্তিগত জেট বিমান আরিজোনার একটি বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পরে, যেখানে একজন পাইলটের মৃত্যু হয়।
এই ধরনের ঘটনাগুলো জনসাধারণের মধ্যে বিমান ভ্রমণের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিমানযাত্রা এখনও নিরাপদ এবং এসব ঘটনার মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (IATA)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে রেকর্ড করা ১,৪৬৮টি দুর্ঘটনার মধ্যে ৭৭0টি অবতরণের সময় এবং ১২৪টি উড্ডয়নের সময় ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানবন্দরের কাছাকাছি আসার পরে পাইলট, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার এবং বিমানের উপর চাপ বাড়ে, যার কারণে এই সময়ে দুর্ঘটনার সম্ভবনা বেশি থাকে। বিশেষ করে, অবতরণের সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ কম থাকে, তাই এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাইলটদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং এই ক্রিয়াগুলোর সময় কোনো অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বা অন্য কোনো কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয় না। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) ১৯৮১ সালে “স্টেরাইল ককপিট” নিয়ম চালু করে, যা এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে পাইলটদের সম্পূর্ণ মনোযোগ উড়োজাহাজ ওড়ানোর দিকে নিবদ্ধ রাখতে সাহায্য করে।
সম্প্রতি, একটি ঘটনা ঘটেছিল যেখানে সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ভুল করে ট্যাক্সিওয়েতে (taxiway) উঠতে শুরু করে। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সতর্কবার্তার পর পাইলটরা দ্রুত ব্রেক করে বিমানটি থামান।
বিমান সংস্থা এবং পাইলটদের সংগঠন এই ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে বিমানযাত্রাকে আরও নিরাপদ করতে কাজ করছে। তারা মনে করেন, নিরাপত্তা একটি সম্মিলিত দায়িত্ব, যা বাণিজ্যিক বিমান সংস্থা থেকে শুরু করে সাধারণ বিমান সংস্থা পর্যন্ত সকলের কাছ থেকে অঙ্গীকার চায়।
সাধারণ বিমান সংস্থাগুলিতে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে, কারণ এখানে ছোট আকারের বিমানের সংখ্যা বেশি থাকে। যদিও এই ধরনের দুর্ঘটনাগুলোতে প্রাণহানির সম্ভবনা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (NTSB) সাম্প্রতিক ঘটনার তদন্ত করছে এবং নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করছে। পাইলটরা ওড়া এবং নামার সময় ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকেন এবং তারা তাদের কাজকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন