যুক্তরাষ্ট্রের লেখকদের কপিরাইট মামলা: ওপেনএআই ও মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই।
যুক্তরাষ্ট্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (artificial intelligence) বা এআই প্রযুক্তি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই (OpenAI) এবং মাইক্রোসফটের (Microsoft) বিরুদ্ধে একগুচ্ছ কপিরাইট (Copyright) মামলার শুনানি এখন নিউইয়র্কে (New York) একসঙ্গে হতে চলেছে। বিভিন্ন লেখকের স্বত্ব রক্ষার দাবিতে করা ১২টি মামলা একত্র করে শুনানির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার মূল বিষয় হলো, এই দুই টেক কোম্পানি তাদের তৈরি করা এআই মডেলগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য লেখক ও সংবাদমাধ্যমের অনুমতি ছাড়াই তাদের লেখা বা প্রকাশিত বিভিন্ন ধরনের কাজ ব্যবহার করেছে। এর ফলে মেধাস্বত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগীয় প্যানেল অন মাল্টি-ডিস্ট্রিক্ট লিটিগেশন (US judicial panel on multidistrict litigation) এক আদেশে জানিয়েছে, মামলাগুলো একত্র করে শুনানির ফলে বিচার প্রক্রিয়া সহজ হবে, সময় বাঁচবে এবং বিভিন্ন রায় নিয়ে জটিলতাও কমবে। আদালতের মতে, এর ফলে মামলার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে।
মামলাকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন— লেখক তা-নেহি কোটস, মাইকেল শ্যাবন, জুনট ডিয়াজ এবং কমেডিয়ান সারা সিলভারম্যান। এছাড়া, নিউইয়র্ক টাইমস (New York Times)-এর মতো সংবাদমাধ্যমও এই তালিকায় রয়েছে। এই মামলাগুলির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন জন গ্রিশাম, জর্জ সন্ডার্স, জোনাথন ফ্রাঞ্জেন ও জোডি পিকোলের মতো খ্যাতিমান লেখকরাও।
তবে, অনেক লেখক এবং সংবাদমাধ্যম এই একত্রীকরণের বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, প্রতিটি মামলার বিষয় ভিন্ন হওয়ায় একসঙ্গে শুনানির ফলে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু আদালত মনে করে, ওপেনএআই ও মাইক্রোসফট তাদের বৃহৎ ভাষা মডেল (large language models) তৈরি করতে কপিরাইটযুক্ত কাজগুলো ব্যবহার করেছে, যা তাদের চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) এবং মাইক্রোসফটের কপাইলটের (Copilot) মতো এআই পণ্যগুলোর ভিত্তি তৈরি করেছে। তাই, এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে মামলাগুলো একত্র করা হয়েছে।
অন্যদিকে, টেক কোম্পানিগুলো জানাচ্ছে, কপিরাইটযুক্ত কাজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা ‘ন্যায্য ব্যবহার’ (fair use)-এর নীতি অনুসরণ করেছে। তাদের মতে, কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে কপিরাইট আইনের অধীনে কোনো কাজ ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যেতে পারে। ওপেনএআইয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা আদালতের এই সিদ্ধান্তে স্বাগত জানাচ্ছেন এবং তাদের মডেলগুলো কীভাবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ডেটা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, তা প্রমাণ করতে প্রস্তুত।
শুধু ওপেনএআই নয়, লেখকদের অনেকেই তাদের এআই মডেল তৈরি করতে কপিরাইট আইন ভাঙার অভিযোগে মেটা’র (Meta) বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন। জানা গেছে, মেটা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ একটি বিতর্কিত ‘শ্যাডো লাইব্রেরি’ (shadow library), ‘লিবিজেন’-এর (LibGen) ব্যবহার অনুমোদন করেছিলেন। যেখানে ৭৫ লক্ষেরও বেশি বই সংরক্ষিত আছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সম্প্রতি লন্ডনে মেটা অফিসের বাইরে লেখকেরা বিক্ষোভ করেছেন। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “আমাদের বই থেকে জাকারবার্গকে সরান” এবং “আমি ভালো একটি সাইন লিখতে পারতাম, কিন্তু তোমরা তো সেটিও চুরি করতে”।
এদিকে, অ্যামাজন (Amazon) তাদের নতুন কিন্ডল (Kindle) ফিচারে এআই ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে। ‘রিস্যাপস’ (Recaps) নামের এই ফিচারের মাধ্যমে পাঠকেরা বইয়ের গল্প ও চরিত্রের সারসংক্ষেপ জানতে পারবেন। অ্যামাজনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই ফিচার তৈরিতে এআই এবং তাদের নিজস্ব মডারেটর ব্যবহার করছে।
যুক্তরাজ্যের সরকারও কপিরাইট বিষয়ক একটি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে, যেখানে এআই কোম্পানিগুলোকে কপিরাইটযুক্ত উপাদান ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে, এর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রভাব নিরূপণের জন্য তারা একটি মূল্যায়ন করতে চাইছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান