যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীনের চরম প্রতিশোধ! নতুন শুল্ক ও রপ্তানি বন্ধ!

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছে চীন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের পালটা জবাব হিসেবে এবার চীনের পক্ষ থেকেও মার্কিন পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, চীন কিছু বিরল খনিজ পদার্থের রপ্তানিও বন্ধ করে দিয়েছে, যা প্রযুক্তি শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদক্ষেপগুলো দু’দেশের মধ্যেকার বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তুলছে।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র সরকার চীনের ওপর ৫৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। এর জবাবে চীন ১০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া এই নতুন শুল্ক ঘোষণা করে।

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র যখন চীনের পণ্য আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিল, তখন চীন কয়লা ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)-এর মতো কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিল।

শুধু শুল্ক আরোপই নয়, চীনium, gadolinium, terbium, dysprosium, lutetium, scandium এবং yttrium সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিরল মৃত্তিকা খনিজ (rare earth minerals) রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে, যা প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পালনের উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

চীন সরকার আরও ১৬টি মার্কিন কোম্পানিকে তাদের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় যুক্ত করেছে। এর ফলে, ওই কোম্পানিগুলো চীনে কোনো পণ্য রপ্তানি করতে পারবে না।

এছাড়াও, আরও ১১টি মার্কিন কোম্পানিকে ‘অনির্ভরযোগ্য সত্তা’র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে চীন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির অভিযোগে স্কাইডিও ইনক ও বিআরআইএনসি ড্রোনস-এর মতো কোম্পানিগুলো এই তালিকায় রয়েছে।

চীন তাইওয়ানকে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে।

এদিকে, চীনের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) অভিযোগ দায়ের করেছে চীন সরকার। তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতি ডব্লিউটিওর নিয়ম লঙ্ঘন করে।

চীনের পক্ষ থেকে আলোচনারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুল্কের আওতায় আসা কোম্পানিগুলো চীনের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করেছে। তাই তাদের চীনে নতুন বিনিয়োগ, আমদানি ও রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

কৃষি বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চীন সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শস্যবীজ (sorghum) এবং তিনটি মার্কিন কোম্পানির পোলট্রি ও অস্থি-খাদ্য (bonemeal) আমদানি তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

এছাড়া, চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত থেকে কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানির ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং তদন্ত শুরু করেছে।

মার্কিন শেয়ার বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। শুক্রবার, বাজারে বড় ধরনের দরপতন দেখা যায়, যার ফলে প্রায় ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে।

প্রযুক্তি খাতের শেয়ারগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কারণ অ্যাপল এবং এনভিডিয়ার মতো কোম্পানিগুলোর উৎপাদন চীন ও তাইওয়ানের ওপর নির্ভরশীল।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এই শুল্ককে ‘জাতীয় সংকট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জাপানের শেয়ার বাজারেও বড় দরপতন দেখা গেছে।

ইউরোপীয় শেয়ার বাজারও গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

তবে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও অর্থনীতির এই পতনের সঙ্গে একমত নন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাজার পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে এবং শীঘ্রই স্থিতিশীল হবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *