মোদী সরকারের মুসলিম সম্পত্তি বিল: আদালতে যাচ্ছে বিরোধীরা!

ভারতের মুসলিম সম্পত্তি বিষয়ক আইন নিয়ে নয়া বিতর্ক, সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানোর ঘোষণা বিরোধীদের।

নয়াদিল্লী: ভারতের মোদী সরকার সম্প্রতি মুসলিম ওয়াকফ সম্পত্তি দেখাশোনার আইন সংশোধন করে একটি বিল পাশ করেছে। এই বিলের বিরুদ্ধে এবার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির বিরোধী দলগুলো।

তাদের অভিযোগ, এই আইনের মাধ্যমে মুসলিমদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে এবং ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চলছে।

নতুন এই আইনের মূল বিষয় হলো, ওয়াকফ বোর্ডের কার্যকারিতা বাড়ানো এবং এর ব্যবস্থাপনায় সরকারের আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

ওয়াকফ হলো মুসলিমদের ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা সম্পত্তি। এই সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যায় না।

মোদী সরকার বলছে, এই পরিবর্তনের ফলে ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসবে এবং দুর্নীতি কমবে।

অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলোর আশঙ্কা, এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকারকে দুর্বল করবে।

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা সোনিয়া গান্ধী এই বিলকে ‘সংবিধানের উপর সরাসরি আঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বিজেপি’র (ভারতীয় জনতা পার্টি) উদ্দেশ্য হলো সমাজে বিভেদ তৈরি করা।

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই তারা সুপ্রিম কোর্টে এই বিলের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন।

এই বিলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য হিসেবে অ-মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করা।

এছাড়াও, সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা তাদের ওয়াকফ সম্পত্তির উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ দেবে।

এই পরিবর্তনের ফলে মসজিদ, মাজার এবং গোরস্থানসহ বহু সম্পত্তির মালিকানা প্রভাবিত হতে পারে।

বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই আইনের মাধ্যমে যারা ব্যক্তিগত লাভের জন্য ওয়াকফ সম্পত্তি লিজ দেয়, তাদের চিহ্নিত করা যাবে।

সরকারের দাবি, এর ফলে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত অর্থ চুরি হওয়া বন্ধ হবে।

তবে, বিরোধী দলগুলোর অনেকে মনে করেন, এই বিলটি আসন্ন রাজ্য নির্বাচনের আগে ভোটারদের মধ্যে মেরুকরণ তৈরির একটি কৌশল।

বিশেষ করে, যে রাজ্যে বিজেপি সরাসরি ক্ষমতায় নেই, সেখানে এই বিল গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন জানিয়েছেন, তার দলও এই আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবে।

এছাড়াও, বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন এই বিলের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

তাদের মতে, এই আইন মুসলিমদের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী।

ভারতে ১৪ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠীর বাস।

তারা দেশটির বৃহত্তম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।

যদিও, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, তারা আর্থিকভাবে পিছিয়ে আছে।

অনেক মুসলিম মনে করেন, ওয়াকফ সম্পত্তিগুলোতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রয়েছে।

তবে, তাদের ভয়, নতুন আইন হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের হাতে মুসলিম সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণের আরও বেশি সুযোগ করে দেবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *