মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের জেরে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহু নামকরা কোম্পানির শেয়ারের দামে বড় ধরনের পতন দেখা দিয়েছে।
প্রযুক্তি থেকে শুরু করে ফ্যাশন, এমনকি ভ্রমণ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এই ধাক্কা থেকে রেহাই পায়নি। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, কারণ তারা আশঙ্কা করছেন যে এর ফলে পণ্যের দাম বাড়বে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি মূলত চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে। এর ফলস্বরূপ, অ্যাপল, নাইকি, অ্যামাজনের মতো বড় কোম্পানিগুলো ক্ষতির শিকার হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপলের শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, কারণ তাদের উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসে। শুল্কের কারণে উৎপাদন খরচ বাড়লে পণ্যের দাম বাড়তে বাধ্য, যা ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে।
ফ্যাশন জায়ান্ট নাইকির ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তাদের তৈরি পোশাকের কাঁচামাল আসে এমন কিছু দেশ, যেখানে শুল্কের হার অনেক বেশি। এর ফলে, নাইকিকে তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে হতে পারে, যা বিশ্বজুড়ে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে।
ভ্রমণ এবং আর্থিক খাতেও এই শুল্ক নীতির প্রভাব স্পষ্ট। বোয়িং এবং ডিজনি’র মতো কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতন হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আমেরিকান এক্সপ্রেসের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এই পরিস্থিতিতে ক্ষতির শিকার হচ্ছে, কারণ তারা ভোক্তাদের ব্যয়ের ওপর নির্ভরশীল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর ফলে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য কমে যেতে পারে এবং বিনিয়োগের পরিমাণও হ্রাস পেতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর থেকে দূরে থাকবে না।
কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনে আমাদের দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে আমদানি ও রপ্তানি খাতে প্রভাব পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো বাংলাদেশি কোম্পানি চীন থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করে, যা পরে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করা হয়, তবে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, বড় কোম্পানিগুলো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিকল্প পথ খুঁজে নিতে পারে। তারা উৎপাদন বা সরবরাহ ব্যবস্থা পরিবর্তনের মাধ্যমে শুল্কের প্রভাব কমাতে চেষ্টা করতে পারে।
অ্যামাজনের মতো ই-কমার্স কোম্পানিগুলো তাদের বিক্রেতাদের বিকল্প খুঁজতে সাহায্য করতে পারে।
সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও অনুভূত হতে পারে। আমাদের দেশের নীতিনির্ধারক এবং ব্যবসায়ীদের এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাদের কৌশল তৈরি করতে হবে, যাতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায় এবং নতুন সুযোগ তৈরি করা যায়।
তথ্য সূত্র: The Guardian