মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশ এবং ডেমোক্র্যাটদের করা একটি মামলার বিষয়ে অনলাইনে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কিছু পোস্ট দেখা যাচ্ছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে ডেমোক্রেট নেতারা মার্কিন নির্বাচনে অ-নাগরিকদের ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য একটি মামলা করেছেন।
এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
আসলে, ডেমোক্রেট দলের নেতারা ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছেন। তাদের মূল অভিযোগ হলো, এই আদেশটি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং এর মাধ্যমে বৈধ ভোটারদের অধিকার খর্ব হতে পারে।
তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই আদেশের মাধ্যমে নির্বাচনের নিয়ম পরিবর্তনে প্রেসিডেন্টের এক্তিয়ার নেই। এছাড়া, মামলাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই আদেশের কিছু শর্ত বৈধ ভোটারদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন অনুযায়ী, অ-নাগরিকদের ফেডারেল নির্বাচনে ভোট দেওয়া সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির নির্বাচন আইন বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল মোর্লে নিশ্চিত করেছেন যে, ডেমোক্র্যাটদের এই মামলাটি মূলত ক্ষমতা বিভাজন সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে, অ-নাগরিকদের ভোট দেওয়ার অধিকারের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি আরও জানান, ফেডারেল আইনে অ-নাগরিকদের ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে নির্বাহী আদেশ কিংবা মামলার ফলাফলের কোনো প্রভাব পড়বে না।
গত ২৫শে মার্চ জারি করা ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশে ভোটার নিবন্ধনের জন্য নাগরিকত্বের প্রমাণসহ অন্যান্য নথিপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়াও, রাজ্য সরকারগুলোকে নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধ দমনে ফেডারেল সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে এই মামলার ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, রিপাবলিকান সিনেটর মাইক লি তার এক পোস্টে লেখেন, ‘শীর্ষ ডেমোক্র্যাটরা কেন আমেরিকান নির্বাচনে অ-নাগরিকদের ভোট দেওয়ার অনুমতি দিতে চাইছে? নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো কারণ আছে।’
তবে, মামলার মূল বিষয়বস্তু এমন নয়। ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ট্রাম্পের এই আদেশ ‘ক্ষমতার অবৈধ প্রয়োগ’ এবং এটি অসাংবিধানিক। কারণ, নির্বাচনের নিয়ম পরিবর্তনের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই এবং এই আদেশটি কংগ্রেস বা সংবিধানের কোনো আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এই মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই আদেশের শর্তাবলী বৈধ ভোটারদের অধিকারকে খর্ব করতে পারে।
সিনেটর লি-এর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তার মুখপাত্র বিলি গ্রিবিন বলেন, ‘ডেমোক্রেট দল যে অ-নাগরিকদেরকে আমেরিকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে দিতে চায়, এটা তাদের কার্যকলাপের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এই মামলাটি সেই উদ্দেশ্য হাসিলের একটি কৌশল।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘সিনেটর লি ডেমোক্র্যাটদের এই ধরনের কার্যকলাপের বিরোধী, যা আমেরিকার নির্বাচনী ব্যবস্থার ক্ষতি করতে পারে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন, বিশেষ করে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে। তিনি দাবি করেছেন যে, তার নির্বাহী আদেশ অ-নাগরিকদের অবৈধভাবে ভোট দেওয়া থেকে রক্ষা করবে।
তবে, বিভিন্ন গবেষণা ও অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, ফেডারেল নির্বাচনে অ-নাগরিকদের ভোট দেওয়া খুবই বিরল ঘটনা এবং এটি একটি গুরুতর অপরাধ। যদিও কিছু স্থানীয় নির্বাচনে অ-নাগরিকদের ভোট দেওয়ার অনুমতি রয়েছে।
ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিস এবং অন্যান্য সংস্থার ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯ শতাংশ ভোটার, অর্থাৎ ২ কোটি ১৩ লক্ষ মানুষের কাছে নাগরিকত্বের প্রমাণস্বরূপ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই।
মামলার সঙ্গে জড়িত ডেমোক্রেট নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ট্রাম্পের এই আদেশ ‘ক্ষমতার জন্য একটি অসাংবিধানিক পদক্ষেপ’, যা বৈধ ভোট বাতিল এবং অপ্রত্যাশিত নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের নজির স্থাপন করতে পারে।
ডেমোক্রেটদের এই মামলার আগে, ‘ক্যাম্পেইন লিগ্যাল সেন্টার’ এবং ‘স্টেট ডেমোক্রেসি ডিফেন্ডারস ফান্ড’ নামের দুটি সংগঠনও একই বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। উভয় মামলাই যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য ডিস্ট্রিক্ট অফ কলাম্বিয়াতে করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।