যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বেগের মাঝে: গর্ভপাত ক্লিনিকে বিক্ষোভের দায়ে ব্রিটিশ নারীর জেল?

যুক্তরাজ্যে গর্ভপাত ক্লিনিকের বাইরে বিক্ষোভ: মার্কিন উদ্বেগের মধ্যে ব্রিটিশ নারী দোষী সাব্যস্ত

যুক্তরাজ্যে গর্ভপাত ক্লিনিকের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শনের অভিযোগে ৬৪ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ নারীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আদালতের এই রায়ের পর দেশটির ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। খবরটি এমন সময় এসেছে যখন যুক্তরাজ্যে গর্ভপাতের অধিকার এবং এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে বিক্ষোভ প্রদর্শনের অধিকার নিয়ে বিতর্ক চলছে।

লিবিয়া তোসিচি-বোল্ট নামের ওই নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০২৩ সালের মার্চ মাসে, বর্নমাউথের একটি গর্ভপাত ক্লিনিকের বাইরে ‘নিরাপদ এলাকা’ (Buffer Zone) লঙ্ঘণ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে, ক্লিনিকগুলোর বাইরে জনসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই ‘নিরাপদ এলাকা’ তৈরি করা হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, তোসিচি-বোল্ট সেখানে একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, যেখানে লেখা ছিল, “কথা বলতে চাই, যদি চান।”

পোল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিচারক ওরলা অস্টিন বলেন, “আসামি তোসিচি-বোল্টের উপস্থিতি ক্লিনিকে আসা নারী, তাদের সহযোগী, কর্মচারী এবং জনসাধারণের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, সে বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই।

বিচারক আরও যোগ করেন, “যদিও এটা স্বীকৃত যে আসামির গর্ভপাত বিরোধী ধারণা রয়েছে, তবে এটা মনে রাখতে হবে যে এই মামলার মূল বিষয় গর্ভপাতের পক্ষে বা বিপক্ষে রায় দেওয়া নয়, বরং তিনি ‘নিরাপদ এলাকা’ (Public Spaces Protection Order – PSPO)-এর বিধি ভেঙেছেন কিনা।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর, বিশেষ করে দেশটির মানবাধিকার ও গণতন্ত্র ব্যুরো (Bureau of Democracy, Human Rights & Labour – DRL), এই মামলার দিকে নজর রাখছিল।

তারা মনে করে, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র পরিপন্থী। ডিআরএল এক বিবৃতিতে জানায়, তারা তোসিচি-বোল্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে এবং মামলার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছে।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও এর আগে যুক্তরাজ্যের নিরাপদ এলাকা তৈরি করার নীতির সমালোচনা করে বলেছিলেন, এটি আসলে মানুষের বাক-স্বাধীনতাকে সীমিত করে।

তিনি এর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, গর্ভপাত ক্লিনিকের কাছে প্রার্থনা করার কারণে এক ব্যক্তির গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা।

যুক্তরাজ্যের সরকার অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্বেগকে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের দেশে দীর্ঘকাল ধরে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিদ্যমান এবং তারা এতে গর্বিত।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তারা এই বিষয়ে তাদের অবস্থান নিয়ে কোনো আপস করবে না।

উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে গর্ভপাত বিষয়ক ক্লিনিকগুলোর আশেপাশে নিরাপদ এলাকা তৈরির সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয় গত ৩১শে অক্টোবর। এই ধরনের ‘নিরাপদ এলাকা’ তৈরির মূল উদ্দেশ্য হলো, গর্ভপাত পরিষেবা গ্রহণ করতে আসা নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী জেস ফিলিপস সেই সময় বলেছিলেন, “এই দেশে নারীদের গর্ভপাত পরিষেবা পাওয়ার অধিকার একটি মৌলিক অধিকার এবং এই পরিষেবা গ্রহণের সময় কারও কোনো প্রকার ভয়ের কারণ থাকতে পারে না।”

বাংলাদেশে গর্ভপাতের বিষয়ে আইনগত এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট যুক্তরাজ্য থেকে ভিন্ন।

এখানে গর্ভপাত একটি স্পর্শকাতর বিষয় এবং এটি বিভিন্ন ধরনের নৈতিক ও ধর্মীয় বিতর্কের জন্ম দেয়। বাংলাদেশের আইনেও কিছু শর্তসাপেক্ষে গর্ভপাতের সুযোগ রয়েছে।

এই মামলার প্রেক্ষাপটে, জনপরিসরে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং নারীদের অধিকারের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *