মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী একজন সালভাদরীয় বাবার ভুলবশত বিতাড়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম সালভাদরীয় সম্প্রদায়ে গভীর ভীতির সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা একজন সালভাদরীয় নাগরিক কিলমার আরমান্দো অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে সম্প্রতি ভুল করে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনাটি মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের একটি বিশাল সালভাদরীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। অভিবাসন কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে গার্সিয়ার বিতাড়ন সেখানকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয়, যখন কিলমার আরমান্দো অ্যাব্রেগো গার্সিয়া নামের ওই ব্যক্তিকে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ শেষে ফেরার পথে পুলিশ আটক করে। এরপর তাকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। মার্কিন অভিবাসন বিভাগ এটিকে “প্রশাসনিক ত্রুটি” হিসেবে উল্লেখ করেছে। কিন্তু এর ফলস্বরূপ গার্সিয়ার পরিবার, বিশেষ করে তার অটিজম আক্রান্ত ছেলের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ।
গার্সিয়ার স্ত্রী জেনিফার স্টেফেনিয়া ভাসকুয়েজ সুরা জানান, তিনি যখন জানতে পারেন তার স্বামীকে আটক করা হয়েছে, তখন তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ছেলেকে বিদায় জানাতে এবং স্বামীর সাথে শেষবারের মতো কথা বলতে গিয়ে দুজনেই কেঁদেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গার্সিয়ার বিরুদ্ধে আগে গ্যাং সদস্যতার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে, পরবর্তীতে আদালতের রায়ে তিনি বিতাড়ন থেকে সুরক্ষা পান। কিন্তু সম্প্রতি তাকে এল সালভাদরের কুখ্যাত কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার ছেলে, যে অটিজম আক্রান্ত, বাবার ব্যবহৃত জামাকাপড় শুঁকে তার পরিচিত গন্ধ খুঁজে ফেরে।
মেরিল্যান্ডের সালভাদরীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা বলছেন, গার্সিয়ার বিতাড়নের ঘটনা তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। তারা আশঙ্কা করছেন, যেকোনো মুহূর্তে তাদেরও একই পরিণতি হতে পারে। এই সম্প্রদায়ের অনেকে গ্রিন কার্ড বা ভিসাধারী, এবং তাদের আশঙ্কা তাদেরও বিতাড়িত করা হতে পারে।
স্থানীয় কমিউনিটি সংগঠক হোর্হে পেরেজ জানান, “আমরা দেখেছি, আইন অনুযায়ী যাদের বিতাড়িত করার কথা নয়, তাদেরও বিতাড়িত করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “যারা নিয়ম মেনে এখানে বসবাস করছি, তাদের প্রতি এই ধরনের আচরণ হতাশাজনক।”
এই ঘটনার পর, মেরিল্যান্ডের সালভাদরীয় সম্প্রদায় তাদের অধিকার রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তারা তাদের পরিবারের জন্য আইনি সহায়তা প্রস্তুত করছে এবং সম্ভাব্য বিতাড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। স্থানীয় শিক্ষক ইয়াকি পালমা জানান, তার স্কুলের সালভাদরীয় ছাত্রছাত্রীরা তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
কাসা (CASA) নামক একটি সংস্থা মেরিল্যান্ডে অভিবাসীদের আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে। সংস্থাটি অভিবাসীদের অধিকার রক্ষার জন্য তিনটি বিলের ওপর কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে, স্কুল ও হাসপাতালের মতো সংবেদনশীল স্থানগুলোতে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের প্রবেশ সীমিত করা এবং রাজ্য ও স্থানীয় সংস্থার ডেটা অ্যাক্সেস সীমিত করার মতো বিষয়গুলো।
কমিউনিটির নেতারা বলছেন, তারা অতীতেও বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেছেন এবং এবারও তারা তাদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন