ট্রাম্পের শুল্ক: মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে পাওয়েলের বড় হুঁশিয়ারি!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন ফেডারেল রিজার্ভ প্রধান জেরোম পাওয়েল সতর্ক করে বলেছেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি উচ্চ মূল্যস্ফীতি ডেকে আনতে পারে এবং তা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে। এই শুল্ক নীতি অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে এবং এর ফলে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যেখানে অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি একসঙ্গে দেখা যায়।

জেরোম পাওয়েলের এই সতর্কবার্তা এমন এক সময়ে এসেছে যখন ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্কের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। এর মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের সকল আমদানির উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনকি, ৯ই এপ্রিল থেকে এই শুল্কের পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। এর ফলস্বরূপ, বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে দরপতন দেখা গেছে। জিপি মরগান-এর অর্থনীতিবিদদের মতে, এই শুল্ক বহাল থাকলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা আসার সম্ভাবনা প্রায় ৬০ শতাংশ।

বিভিন্ন বিশ্লেষক সংস্থাগুলি ধারণা করছে যে, গাড়ির মতো কিছু পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বাণিজ্য ঘাটতি দূর করে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার চেষ্টা করছে।

কিন্তু এর ফলে অর্থনীতি ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর দিকে যেতে পারে, যা একটি উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এর ফলে একদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, অন্যদিকে বেকারত্ব বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতিও বাড়তে থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে ফেডারেল রিজার্ভের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়বে।

১৯৭০-এর দশকে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছিল। ফেডারেল রিজার্ভ বর্তমানে সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে। তারা মূল্যস্ফীতি হ্রাসের জন্য অপেক্ষা করছে এবং ট্রাম্পের নীতি পরিবর্তনের অর্থনৈতিক প্রভাবগুলোও পর্যবেক্ষণ করছে।

গত মাসে প্রকাশিত তাদের সর্বশেষ অর্থনৈতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, তারা ধারণা করছে, এই বছর তারা সুদের হার কমাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার এখনো ভালো অবস্থানে রয়েছে, তাই ফেডারেল রিজার্ভের তাৎক্ষণিক সুদের হার কমানোর প্রয়োজন নেই।

তবে, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি যদি বহাল থাকে, তাহলে এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। একদিকে যদি উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব বাড়ে, তাহলে ফেডারেল রিজার্ভ কর্মকর্তাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, তাদের মূল দায়িত্ব হলো কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখা।

ইতিমধ্যেই, ট্রাম্প ধাতু ও গাড়ির উপর শুল্ক আরোপ করেছেন এবং চীনের উপর শুল্কের পরিমাণ দ্বিগুণ করে ২০ শতাংশ করেছেন। চীনও এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।

ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে। মার্চ মাসে ভোক্তাদের আস্থা কমে যায়, যা ২০২১ সালের জানুয়ারীর পর সর্বনিম্ন। ফেব্রুয়ারিতে ছোট ব্যবসার মধ্যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ১৯৭৩ সালের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

ফেডারেল রিজার্ভের ভাইস চেয়ার, ফিলিপ জেফারসন সতর্ক করেছেন যে, এই অনিশ্চয়তা যদি অব্যাহত থাকে বা আরও খারাপ হয়, তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। জেরোম পাওয়েল মনে করেন, ট্রাম্পের এই নীতির মধ্যে ফেডারেল রিজার্ভের জন্য সুদের হার আরও কিছুদিন অপরিবর্তিত রাখাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত।

ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা ৬-৭ মে তারিখে সুদের হার নির্ধারণের জন্য বৈঠকে বসবেন। তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *