যুদ্ধ ঘোষণা! বাণিজ্য যুদ্ধে একগুঁয়ে ট্রাম্প, টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি!

ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে পিছপা হবেন না বলে ঘোষণা করার পরেই বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতন শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের জেরে চীনসহ বিভিন্ন দেশ পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

ট্রাম্প তার ‘সত্য সামাজিক মাধ্যম’-এ (Truth Social) লিখেছেন, তিনি তার বাণিজ্য নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবেন না। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, যারা আমেরিকায় বিনিয়োগ করতে আসছেন, তাদের জন্য এটা ‘আর্থিকভাবে লাভবান’ হওয়ার দারুণ সুযোগ। তবে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক তো লামের সঙ্গে তার একটি ফলপ্রসূ আলোচনার কথা জানান ট্রাম্প। যেখানে ভিয়েতনামের পক্ষ থেকে শুল্ক শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে একটি বৈঠকের আশা প্রকাশ করেছেন।

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পর গত দু’দিন ধরে বিশ্ব বাজারের পরিস্থিতি টালমাটাল। তিনি দাবি করেছেন, এই নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন শিল্পে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং ফেডারেল সরকারের রাজস্ব কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাবে। তবে, অনেক অর্থনীতিবিদ এর তীব্র বিরোধিতা করে বলেছেন, এর ফলে অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেবে এবং পণ্যের দাম বাড়বে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করে বলেছে, এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বলেছেন, “আমরা এখনো শুল্ক আরোপের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রভাবগুলো মূল্যায়ন করছি, তবে এটি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করবে।

শুক্রবার, বাজারের শুরুতে ট্রাম্প চীনের সমালোচনা করে বলেন, চীন প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে ‘আতঙ্কিত’ হয়েছে। চীনের শিল্প সংস্থাগুলো ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, এর ফলে বিশ্বব্যাপী বস্ত্র শিল্পের সরবরাহ শৃঙ্খলে ক্ষতি হবে।

শেয়ার বাজারের চিত্রও বেশ উদ্বেগজনক। এসএন্ডপি ৫০০ সূচক ৪.৪% কমেছে, যা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া পতনের ধারাবাহিকতা। এই সূচকটি যুক্তরাষ্ট্রের ৫০০টি প্রধান কোম্পানির শেয়ারের গতিবিধি নির্দেশ করে। ব্যাংক খাতের শেয়ার প্রায় ৬% কমেছে, যা বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে মন্দা আসার আশঙ্কার প্রতিফলন। অপরিশোধিত তেলের দামও কমেছে, যা ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, বাজারগুলো ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সঙ্গে ‘মানিয়ে নেবে’। তবে, ডেমোক্র্যাট দলের নেতারা এই শুল্কের অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিটজকার একে ‘মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কর বৃদ্ধি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর অ্যালেক্স প্যাডিলা বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে তিনি ‘ওয়াল স্ট্রিটের ব্যবসায়ীদের প্রতি সহানুভূতিশীল’।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং বাণিজ্য সম্পর্ক কিভাবে প্রভাবিত হবে, তা এখন উদ্বেগের বিষয়। বিশ্ব বাজারের এই অস্থিরতা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে প্রভাব ফেলতে পারে। বাণিজ্য ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারেও এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই, সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *