শিরোনাম: প্যারিসে ডেভিড হকের্নির বিশাল প্রদর্শনী: শিল্পের এক বৃহত্তর উদযাপন
প্যারিসের লুই ভিতোঁ ফাউন্ডেশনে (Fondation Louis Vuitton) শুরু হতে চলেছে বিশ্বখ্যাত শিল্পী ডেভিড হকের্নির কাজের এক বিশাল প্রদর্শনী। ‘ডেভিড হকের্নি ২৫’ শিরোনামের এই প্রদর্শনীতে দর্শকদের জন্য থাকছে গত ৭০ বছরের শিল্পী জীবনের নানা দিক।
এই প্রদর্শনী শুধু হকের্নির কাজের একটি উদযাপন নয়, প্যারিসের সংস্কৃতি অঙ্গনে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচনও বটে।
১৯৩৫ সালে ইংল্যান্ডের ব্রাডফোর্ডে জন্ম নেওয়া হকের্নি, আধুনিক শিল্পের জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর চিত্রকর্মে উজ্জ্বল রং এবং দৃশ্যের গভীরতা দর্শকদের মন জয় করে।
প্রদর্শনীতে থাকছে হকের্নির ১৯৫৫ সাল থেকে শুরু করে ২০২০ সাল পর্যন্ত করা ৪৫০টির বেশি চিত্রকর্ম। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাক্রিলিক পেইন্টিং, আইপ্যাড ড্রয়িং এবং ভিডিও ইনস্টলেশন।
সুইমিং পুলের দৃশ্য থেকে শুরু করে ষাটের দশকের প্রতিকৃতি, ইয়র্কশায়ার ও নরম্যান্ডির প্রাকৃতিক দৃশ্য – সবই স্থান পেয়েছে এই প্রদর্শনীতে।
এছাড়াও, এখানে দেখা যাবে তাঁর কিছু অদেখা কাজ, যা তিনি উইলিয়াম ব্লেকের অনুপ্রেরণায় তৈরি করেছেন।
ফ্রান্স এবং হকের্নির মধ্যে সম্পর্কটা যেন ভালোবাসার।
ফরাসি লেখক ক্যাথরিন কুসেট এই প্রসঙ্গে বলেন, “হকের্নি এখানে নিজেকে খুবই আপন মনে করেন।
তিনি ভালো খাবার ও ওয়াইন পছন্দ করেন। এছাড়া, তাঁর ধূমপানের প্রতি ভালোবাসাকেও ফরাসিরা বেশ ভালোভাবে গ্রহণ করে।”
কুসেট আরও যোগ করেন, “হকের্নির ছবির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, এগুলো সহজে বোঝা যায়।
ফ্রান্সে, ম্যাতিস, বোনার্দ-এর মতো শিল্পীরাও তাঁদের ছবিতে এই ধরনের মোহনীয়তা ফুটিয়ে তুলেছেন।”
এই বিশাল প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে ফ্রান্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।
লুই ভিতোঁ ফাউন্ডেশন-এর অত্যাধুনিক স্থাপত্যে সজ্জিত ১১টি গ্যালারিতে এই প্রদর্শনী দর্শকদের জন্য এক বিশেষ অভিজ্ঞতা নিয়ে আসবে।
ফাউন্ডেশনটি তৈরি করেছেন বিখ্যাত স্থপতি ফ্রাঙ্ক গেহরি।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই প্রদর্শনী প্যারিসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, প্যারিস আবার ইউরোপের শিল্পকলার কেন্দ্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
এই লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
যেমন, নতুন নতুন জাদুঘর তৈরি করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক মানের শিল্পকর্ম প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই, লুই ভিতোঁ ফাউন্ডেশন-এর এই প্রদর্শনী।
এই প্রদর্শনীতে হকের্নির বিখ্যাত কিছু কাজ, যেমন ‘এ বিগার স্প্ল্যাশ’ এবং ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ক্লার্ক অ্যান্ড পার্সি’ দর্শকদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয় হবে।
শিল্পকলার বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইউরোপের মধ্যে ব্রিটেনের পরেই ফ্রান্সের অবস্থান।
২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী শিল্পকর্ম বিক্রির বাজারে ফ্রান্সের অংশ ছিল ৭ শতাংশ, যেখানে ব্রিটেনের ছিল ১৭ শতাংশ।
প্যারিসের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, তারা শিল্পকলার ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করতে চাইছে।
এই প্রদর্শনী শুধু ডেভিড হকের্নির কাজের প্রতি উৎসর্গীকৃত নয়, বরং এটি প্যারিসের শিল্পকলার ভবিষ্যৎকেও নতুন পথে চালিত করবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান