মহাকাশ অভিযানে নতুন দিগন্ত, প্রথমবারের মতো পৃথিবীর মেরু অঞ্চল প্রদক্ষিণ করে ফিরল স্পেসএক্সের ‘ফ্রেম২’ মিশন।
মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করে সম্প্রতি পৃথিবীতে ফিরে এসেছে স্পেসএক্সের ‘ফ্রেম২’ মিশন। এই মিশনে প্রথমবারের মতো মানুষ সরাসরি পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর উপর দিয়ে প্রদক্ষিণ করে নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি বিলিয়নেয়ার এবং এই মিশনের অর্থ যোগানদাতা, চুং ওয়াংয়ের নেতৃত্বে এই মিশনে ছিলেন আরও তিনজন অভিযাত্রী।
গত সোমবার, ফ্রেম২ মিশনের নভোচারীরা পৃথিবীর কক্ষপথে যাত্রা শুরু করেন। এরপর ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলের কাছাকাছি অবতরণের মাধ্যমে মিশনটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
স্পেসএক্সের ইতিহাসে এই প্রথম, কোনো মানব মিশন পশ্চিম উপকূলে অবতরণ করলো। এর আগে, স্পেসএক্সের ক্রু মিশনগুলো সাধারণত ফ্লোরিডার কাছাকাছি অবতরণ করত।
এই মিশনের প্রধান আকর্ষণ ছিল মেরু অঞ্চলে মানুষের অভিযান। সাধারণত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (International Space Station) থাকা নভোচারীরা পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছাকাছি কক্ষপথে অবস্থান করেন, যে কারণে তাদের পক্ষে মেরু অঞ্চলের দৃশ্য দেখা সম্ভব হয় না।
তবে, ফ্রেম২ মিশনের নভোচারীরা এই অচেনা জগৎ কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান।
মিশনের সময়, ফ্রেম২ ক্রু সদস্যরা বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল মহাকাশ থেকে মেরু অঞ্চলের আলো (অরোরা) চিত্রগ্রহণ করা এবং মহাকাশে গমনের কারণে সৃষ্ট অসুস্থতা নিয়ে গবেষণা করা।
এই মিশনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে, নরওয়েজিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক জানিকে মিককেলসেন, জার্মান ভিত্তিক রোবোটিক্স গবেষক রাবেয়া রগে এবং অস্ট্রেলিয়ান অভিযাত্রী এরিক ফিলিপস-এর নাম উল্লেখযোগ্য।
মিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ক্রু সদস্যদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। তারা বিশেষভাবে ডিজাইন করা কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে মহাকাশ ভ্রমণের সময় তাদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তন এবং ঘুমের ধরণ পর্যবেক্ষণ করেন।
এছাড়াও, তারা মহাকাশে মাশরুম চাষ করার চেষ্টা করেন এবং তাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপের চিত্রও ধারণ করেন।
এই মিশনের সাফল্যের পেছনে ছিলেন চুং ওয়াং। তিনি জানান, মহাকাশে যাত্রার প্রথম কয়েক ঘণ্টা খুব একটা আরামদায়ক ছিল না।
সবাই মহাকাশ ভ্রমণের কারণে অসুস্থ বোধ করেছিলেন এবং কয়েকবার বমিও করেছিলেন। তবে, দ্বিতীয় দিনের সকাল নাগাদ সবাই সুস্থ অনুভব করতে শুরু করেন।
এই মিশনের মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা মহাকাশে মানুষের স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতা সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন। যা ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ অভিযানে সহায়ক হবে।
ফ্রেম২ মিশন প্রমাণ করেছে যে, ব্যক্তিগত অর্থায়নেও মহাকাশ অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব, যা ভবিষ্যতে মহাকাশ গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
তথ্যসূত্র: CNN
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			