একাকী ভ্রমণের প্রস্তুতি: নারীদের জন্য কিছু জরুরি পরামর্শ।
বর্তমান সময়ে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভ্রমণের আগ্রহ বাড়ছে। একা ভ্রমণের ধারণা অনেকের কাছেই নতুন এবং আকর্ষণীয়।
নিজের মতো করে একটি নতুন স্থানে ঘুরে আসা, সেখানকার সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা উপভোগ করার সুযোগ করে দেয় এই একাকী ভ্রমণ। তবে, একা ভ্রমণ করার আগে কিছু বিষয় জানা ও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।
সম্প্রতি, ভ্রমণ বিষয়ক জনপ্রিয় সংস্থা ‘লোনলি প্ল্যানেট’-এর নারী লেখকদের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, কিভাবে একা ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে আরও নিরাপদ ও আনন্দদায়ক করে তোলা যায়। নিচে সেই সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ তুলে ধরা হলো:
১. প্রথমে ছোট পদক্ষেপ নিন:
যদি একা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা একেবারে নতুন হয়, তবে বড় কোনো ভ্রমণে যাওয়ার আগে কাছাকাছি কোনো স্থানে এক দিনের জন্য একা ভ্রমণ করে দেখতে পারেন। এতে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং একা ভ্রমণের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাবে।
২. হোস্টেলে থাকার কথা বিবেচনা করুন:
নতুন বন্ধু তৈরি এবং অন্যান্য ভ্রমণকারীদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য হোস্টেল একটি ভালো জায়গা। হোস্টেলে বিভিন্ন বয়সের মানুষের সঙ্গে মিশে তাদের ভ্রমণ বিষয়ক টিপস ও গল্প শোনা যেতে পারে।
অনেক হোস্টেলে ব্যক্তিগত কক্ষের ব্যবস্থা থাকে, যা নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য দুটোই নিশ্চিত করে।
৩. দলবদ্ধ ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন:
যদি বড় কোনো একা ভ্রমণে যেতে দ্বিধা বোধ করেন, তাহলে প্রথমে কোনো ট্যুর গ্রুপের সঙ্গে যেতে পারেন। এতে করে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা সুসংগঠিত থাকবে এবং নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হবে।
৪. পরিচিত নারী হোস্টের সন্ধান করুন:
আবাসন বুক করার সময় নারী হোস্টের সন্ধান করা ভালো। অনেক সময় নারী হোস্টরা স্থানীয় সংস্কৃতি ও নিরাপদ স্থান সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে পারেন।
৫. নৌকায় বা বাসে ভ্রমণ করুন:
ভ্রমণের শুরুতে কোনো শহর সম্পর্কে ধারণা পেতে হয়র-অন, হয়র-অফ বাস অথবা বোট ট্যুর নেওয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো সম্পর্কে জানা যায়।
৬. বই সঙ্গে নিন:
ভ্রমণে একাকীত্ব দূর করতে একটি ভালো বইয়ের জুড়ি নেই। বই পড়ার মাধ্যমে ট্রেনের বিলম্ব অথবা কোনো রেস্টুরেন্টে খাবারের জন্য অপেক্ষা করার সময়টা উপভোগ করা যেতে পারে।
৭. বন্ধু তৈরি করুন – অথবা না করুন:
একা ভ্রমণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো নিজের মতো করে সময় কাটানো যায়। কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে না করলে, নিজের মতো করে সবকিছু উপভোগ করা যেতে পারে।
আবার, যদি কারো সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে, তবে নির্দ্বিধায় তা শুরু করা যেতে পারে।
৮. পছন্দের গান শুনুন:
ভ্রমণের সময় গান শোনা মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। নিজের পছন্দের গান শুনে একদিকে যেমন ভ্রমণের স্মৃতিগুলো উপভোগ করা যায়, তেমনি অন্য কারো সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনও হয় না।
৯. বিশ্রাম নিন:
দীর্ঘ ভ্রমণের সময় মাঝে মাঝে বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। সাত থেকে দশ দিন ভ্রমণের পর একদিন বিশ্রাম নেওয়ার পরিকল্পনা করতে পারেন।
১০. দিকনির্দেশনার জন্য হেডফোন ব্যবহার করুন:
নতুন কোনো শহরে হেঁটে ঘোরার সময়, নেভিগেশনের জন্য হেডফোন ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আশেপাশে তাকিয়ে থাকার প্রয়োজনীয়তা কমে যায় এবং আপনি আপনার গন্তব্যের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন।
১১. পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে নিন:
একা ভ্রমণে ছবি তোলা ও নেভিগেশনের জন্য মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়ে। তাই, ফোনের চার্জ দেওয়ার জন্য একটি পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা ভালো।
১২. পরিবারের সঙ্গে আপনার অবস্থান শেয়ার করুন:
ভ্রমণের সময় পরিবারের সঙ্গে আপনার লোকেশন শেয়ার করার ব্যবস্থা রাখতে পারেন। এর ফলে আপনার পরিবারের সদস্যরা আপনার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারবে এবং আপনিও মানসিক শান্তি পাবেন।
১৩. পছন্দের গন্তব্যে ভ্রমণ করুন:
অনেকেই হয়তো মনে করেন, কিছু জায়গা শুধু যুগলদের জন্য। কিন্তু আপনি চাইলে একা গিয়েও সেই স্থানগুলো উপভোগ করতে পারেন।
১৪. মন খুলে কাঁদুন:
ভ্রমণের সময় একাকীত্ব অনুভব করা স্বাভাবিক। যদি মন খারাপ হয়, তবে কাঁদতেও পারেন। নিজের অনুভূতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে চেষ্টা করুন।
১৫. বর্তমানকে উপভোগ করুন:
একা ভ্রমণের সময় সবকিছু নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ পাওয়া যায়। তাই, ফোন ব্যবহার কমিয়ে চারপাশের প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
একা ভ্রমণ নারীদের জন্য একটি দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভ্রমণের পরিকল্পনা করে, এই অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান