কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের প্রত্যাবর্তন: ঐতিহ্য আর ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি
ইংল্যান্ডের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ ক্রিকেট আবার ফিরে এসেছে, আর এর সঙ্গেই যেন খেলাটির ঐতিহ্য আর ভবিষ্যতের এক ঝলক দেখা গেল। সবুজ ঘাসের মাঠ, উজ্জ্বল রোদ— মাঠের চারপাশে তাকালে বা সামাজিক মাধ্যমে চোখ রাখলেই বোঝা যায়, এই প্রতিযোগিতা এখনো কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রীষ্মের শুরুতে বা শেষে এর আয়োজন করা হয়, আর সামনের মাসগুলোতে হয়তো এর কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন আসবে, কিন্তু কিছু দিক থেকে দেখলে চ্যাম্পিয়নশিপ আগের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রিকেট বিশ্বে এখন অর্থের ছড়াছড়ি, সেই সঙ্গে বাড়ছে টি-টোয়েন্টির রমরমা। এমন পরিস্থিতিতে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ যেন এক নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল।
১৩৫ বছরের ঐতিহ্য আর ইতিহাসের সাক্ষী এই টুর্নামেন্ট। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে শুধু দু’বার এর আয়োজন বন্ধ ছিল।
এই চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দিনগুলোতে ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে যারা খেলেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম পরিচিত মুখ ছিলেন কিথ কুক। প্রায় ৫২ বছর ধরে তিনি এই ক্লাবের ক্রিকেট অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন।
১৯৭৩ সালে, ১৭ বছর বয়সে কিথ কুক প্রথমবারের মতো ওয়ারউইকশায়ারের আঙিনায় পা রাখেন। তিনি তখন অফিসের জুনিয়র হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। স্থানীয় গ্যাস বোর্ড এবং আদালতের চাকরির চেয়ে তাঁর কাছে এই কাজটি বেশি আকর্ষণীয় ছিল।
ক্লাবের বিদায় অনুষ্ঠানে তাঁকে সম্মান জানাতে এসেছিলেন পুরনো দিনের অনেক তারকা খেলোয়াড়। ডেনিস অ্যামিস, গ্ল্যাডস্টোন স্মল এবং জিতান প্যাটেলের মতো কিংবদন্তিরাও ছিলেন সেখানে। বর্তমান দলের খেলোয়াড়েরা গার্ড অফ অনার দেন, যা ছিল সত্যিই আবেগপূর্ণ।
খেলোয়াড় থেকে শুরু করে মাঠকর্মী— সবার কাছেই কিথ কুক ছিলেন একজন ‘বিশেষ মানুষ’। তাঁর কর্মজীবনের দিকে তাকালে বোঝা যায়, তিনি খেলোয়াড়দের জন্য কতটা নিবেদিত ছিলেন।
স্যাম হেইন, যিনি কিনা কিথ কুককে ‘ইংলিশ বাবা’ বলে ডাকেন, তাঁর ইংল্যান্ডে আসার পর থেকে সবকিছু তিনিই দেখাশোনা করেছেন। এমনকি ক্রিস ওকস-এর মতো খেলোয়াড়ও কিথ কুককে একজন ‘মহান ব্যক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
কুক নিজে অবশ্য এত আলোচনায় কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “এখানে আসার পর মনে হয়েছে, আমি এমন কিছুর অংশ, যা একজন ব্যক্তির চেয়ে অনেক বড়। এটাই এই ক্লাবের পরিচয়।
স্টিভ রাউজের মতো আমাদের পুরনো মাঠকর্মীরাও এখানে এসেছেন, কারণ তাঁরা জানেন, আমরা কিসের সঙ্গে জড়িত।
ভবিষ্যতের কথা বলতে গিয়ে কুক স্বীকার করেন, খেলোয়াড়দের মধ্যে দলের প্রতি সেই আগের মতো টান হয়তো থাকবে না। এখনকার খেলোয়াড়েরা তাঁদের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দিকে বেশি মনোযোগ দেন।
কাউন্টি ক্রিকেটের এই ঐতিহ্য যদি হারিয়ে যায়, তবে তিনি দুঃখিত হবেন।
বর্তমানে, “দ্য হান্ড্রেড”-এর মতো নতুন নতুন টুর্নামেন্ট আসায় ইংলিশ ক্রিকেটে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, আশা করা হচ্ছে, খেলার সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া হবে।
ক্রিকেট একটি আবেগ, যা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। খেলোয়াড়, কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সমর্থক— সবার মিলিত প্রচেষ্টায় খেলাটি টিকে থাকে, আরও এগিয়ে যায়।
কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের মতো ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্টগুলোও ক্রিকেটের এই পথচলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান