ফর্মুলা ওয়ানের (Formula One) জগতে ল্যান্ডো নরিসের (Lando Norris) উত্থান এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ম্যাকলারেন (McLaren) দলের এই ব্রিটিশ চালক সম্প্রতি জানিয়েছেন, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে হলে ‘খুনি’ মানসিকতার প্রয়োজন নেই।
বরং ভালো মানুষ হিসেবেও এই কৃতিত্ব অর্জন করা সম্ভব।
জাপানের সুজুকায় আসন্ন গ্রাঁ প্রিঁ-র (Grand Prix) আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ২৫ বছর বয়সী নরিস বলেন, “আমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। তবে আমি ভালো মানুষ হিসেবেই ভালো করতে চাই।
অন্যদের মতো জীবনের অনেক কিছু বিসর্জন দিতে আমি রাজি নই।”
সাত মৌসুম ধরে ফর্মুলা ওয়ানে দৌড়ানোর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নরিসের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় এখন চলছে। ম্যাকলারেন বর্তমানে গ্রিডের দ্রুততম গাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ইতোমধ্যে নরিস একটি জয় ও দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো অবস্থানে রয়েছেন। যদিও তার সতীর্থ অস্কার পিয়াস্ট্রি (Oscar Piastri) এবং বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যাক্স ভারস্টাপেনের (Max Verstappen) সঙ্গে তার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত মৌসুমে, নরিসকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশেষ করে ম্যাক্স ভারস্টাপেনের আগ্রাসী ড্রাইভিংয়ের কারণে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন নরিসের মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে।
তবে নরিস সেই চাপ সামলেছেন এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব ও মানসিক অবসাদ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন, যা তার কাছে রেসিংয়ের সাফল্যের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ছোটবেলায় নরিসের আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। ব্রিস্টলে (Bristol) বেড়ে ওঠা নরিসের বাবা-মা প্রথমে কিছুটা দ্বিধা নিয়ে তাকে একটি কোয়াড বাইক কিনে দিয়েছিলেন।
কিন্তু ছেলের নিরাপত্তার কথা ভেবে সেটি বিক্রি করে দেন। পরে কার্টিংয়ের (karting) মাধ্যমে তিনি রেসিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হন। শুরুতে তার কোনো পেশাদার ক্যারিয়ার গড়ার পরিকল্পনা ছিল না, বরং খেলাটা উপভোগ করতেন।
নরিসের ভাষ্যে, “আমি সবসময় নিজেকে লুইস হ্যামিল্টন (Lewis Hamilton) বা আমার সময়ের অন্য রেসারদের মতো ভালো হিসেবে দেখিনি। তাদের সঙ্গে রেস করতে পারাটাই আমার কাছে আনন্দের ছিল।”
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তার সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে নরিস বলেন, “যখন আমি আমার পারফর্মেন্স নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করতাম, তখন তা আমাকে হতাশ করত।
কিন্তু আমি এখন আগের চেয়ে ভালো আছি।”
ফর্মুলা ওয়ানের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিকো রোজবার্গ (Nico Rosberg) তাকে পরামর্শ দিয়েছেন এবং এই বিষয়ে সাহায্য করেছেন।
নরিসের মতে, নিজের দুর্বলতাগুলো সবার সামনে তুলে ধরাটা তাকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং আসন্ন চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য প্রস্তুত হতে সহায়তা করছে।
নরিসের এই মানসিকতা অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি মনে করেন, জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রেখেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, “আমি অন্যদের দেখাতে চাই যে, ‘খুনি’ মানসিকতা ছাড়াই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব।”
নরিসের এই ভাবনা একদিকে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনই অনেকের কাছে অনুপ্রেরণাদায়ক। এখন দেখার বিষয়, এই ‘ভালো মানুষ’ মানসিকতা নিয়ে তিনি কতটা পথ পাড়ি দেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান