আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বড় ধরনের দরপতন, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব, বাংলাদেশের জন্য কী অপেক্ষা করছে?
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিটে সূচকগুলো উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, যা কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, S&P 500 সূচক এক সপ্তাহে ৬ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে, ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ-এর পতন হয়েছে ৫.৫ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন সরকারের পক্ষ থেকে মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণেই এই দরপতন। চীন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের জবাবে, যুক্তরাষ্ট্রের থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর একই হারে শুল্ক বসিয়েছে। এর ফলে, বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি অশনি সংকেত। এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের একটি ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরেও, বাজারের এই দরপতন অব্যাহত ছিল। সাধারণত, কর্মসংস্থান বিষয়ক এই প্রতিবেদনকে অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু বাণিজ্য যুদ্ধের গভীর উদ্বেগের কারণে, বাজারের এই নেতিবাচক প্রবণতাকে ঠেকানো সম্ভব হয়নি।
শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতা বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। জার্মানির DAX সূচক ৫ শতাংশ এবং ফ্রান্সের CAC 40 সূচক ৪.৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচকেও ২.৮ শতাংশ পতন দেখা গেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা কোম্পানি ও পরিবারগুলোকে ঋণ নিতে উৎসাহিত করবে। তবে, মুদ্রাস্ফীতির উদ্বেগের কারণে ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারকদের পক্ষে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সতর্ক করে বলেছেন, শুল্ক বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এই পরিস্থিতিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। তিনি এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, ‘এখন ধনী হওয়ার দারুণ সুযোগ’। অন্যদিকে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চীনের বাজারে ব্যবসা করা DuPont এবং GE Healthcare-এর মতো বহুজাতিক সংস্থা।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের (RMG) উপর। এছাড়া, রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে, কারণ বিশ্ব মন্দা প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও দেখা দিতে পারে অনিশ্চয়তা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে। বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে, দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া, সরকার এবং ব্যবসায়ীদের নতুন বাজার অনুসন্ধানে মনোযোগ দিতে হবে, যাতে বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা যায়।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।