মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাসায়নিক ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প দূষণ নিয়ন্ত্রণের নিয়মকানুন থেকে ছাড় চাইছে। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবের অংশ হিসেবে তারা এই সুবিধা পেতে চাইছে, যা পরিবেশ সুরক্ষার বিদ্যমান আইনগুলোকে দুর্বল করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ)-এর নিয়ম অনুযায়ী, এই শিল্পখাতকে পারদ, আর্সেনিক এবং বেনজিনের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক নির্গমন কমাতে হয়। কিন্তু আমেরিকান কেমিস্ট্রি কাউন্সিল এবং আমেরিকান ফুয়েল ও পেট্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স-এর মতো শিল্পগোষ্ঠীগুলো চাইছে যেন তাদের এই নিয়ম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তাদের দাবি, পরিবেশ রক্ষার নামে ইপিএ-এর তৈরি করা বিধিগুলি বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং এতে তাদের ব্যবসার খরচ অনেক বেড়ে যাবে।
ইপিএ-এর পক্ষ থেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এই ছাড় দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ ই-মেইল ঠিকানা তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো প্রেসিডেন্টের কাছে দু’বছরের জন্য ছাড়ের আবেদন করতে পারবে। এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, এটি “দূষণকারীদের প্রবেশদ্বার” হিসেবে কাজ করবে, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা দুর্বল করে দেবে।
তাদের মতে, এর ফলে কয়েকশ’ কোম্পানি তাদের ওপর আরোপিত বিধিগুলি এড়িয়ে যেতে পারবে।
পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড’ (ইডিএফ)-এর বক্তব্য অনুযায়ী, এই ছাড় পেলে এক্সনমোবিল, ম্যারাথন পেট্রোলিয়াম, শেভরন, ডাউ এবং ডুপন্টের মতো বৃহৎ কোম্পানিগুলোও সুবিধা পাবে। ইডিএ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ছাড় দেওয়ার ফলে শিশুদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হবে।
কারণ, পারদের মতো বিষাক্ত পদার্থ শিশুদের মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি জন্মগত ত্রুটিও সৃষ্টি করতে পারে।
ইপিএ-এর প্রশাসক হিসেবে নতুন দায়িত্ব পাওয়া লি জেলডিন ইতোমধ্যেই পরিবেশ আইনের প্রয়োগ দুর্বল করার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির দূষণ সংক্রান্ত নিয়মাবলী শিথিল করারও ঘোষণা দিয়েছেন।
এছাড়াও, তিনি ইপিএ-এর বাজেট ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর প্রস্তাব করেছেন এবং সংস্থার কর্মী সংখ্যাও কমানোর চেষ্টা করছেন।
যদিও এই ছাড় দেওয়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। রাসায়নিক শিল্পগোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, তারা প্রশাসনের এই পদক্ষেপে খুবই খুশি এবং তারা ইপিএ-এর সঙ্গে মিলে বিজ্ঞানসম্মত নিয়ম তৈরি করতে চায়, যা জনস্বাস্থ্য ও সুরক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে, কিন্তু একই সঙ্গে দেশীয় উৎপাদকদের ওপর অযাচিত বোঝা চাপাবে না।
ইডিএফ ইতোমধ্যেই ইপিএ-এর এই বিশেষ পোর্টাল সম্পর্কিত সমস্ত তথ্যের জন্য তথ্যের অধিকার আইনে আবেদন করেছে। তারা জানিয়েছে, প্রয়োজন অনুযায়ী এই তথ্য জনসমক্ষে আনতে তারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস